শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিলে কঠোর হবে বাংলাদেশ

আগামী সপ্তাহে ডি-এইট বৈঠক

রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিল করতে ডি-এইট সম্মেলনে কঠোর অবস্থান নেবে বাংলাদেশ। এ ফোরামে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুলস অব অরিজিনে স্থানীয়ভাবে ৪০ শতাংশ উৎপাদন মূল্য যুক্ত করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে তা কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হোক। জানা গেছে, ২০-২১ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ডি-এইট দেশগুলোর বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের এ দাবি শক্তভাবে তুলে ধরা হবে।
উন্নয়নশীল আটটি ইসলামি দেশ নিয়ে গঠিত এ আন্তর্জাতিক ফোরামে একমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানসহ অন্য সদস্য দেশগুলো তাতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের তুলে ধরাসহ নতুন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একত্রিত হয়ে যে আন্তর্জাতিক গ্রুপ তৈরি করেছিল তা এখন অকার্যকর হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতিতে ইস্তাম্বুলে শুরু হতে যাচ্ছে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজকুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ডি-এইটের প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্টে (পিটিএ) সদস্য দেশগুলোর পণ্য রপ্তানিতে রুলস অব অরিজিনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মূল্য সংযোজন ৪০ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৪ মে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ চুক্তিটি হয়। চুক্তির শুরু থেকেই এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিল করে ৩০ শতাংশ করার দাবি জানায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও অন্য সদস্য দেশগুলোর আপত্তিতে বাংলাদেশের দাবি কার্যকর হয়নি। উন্নয়নশীল ইসলামি দেশগুলো নিয়ে গঠিত ডি-এইট নামক এ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সদস্য দেশগুলো হলো পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর ও নাইজেরিয়া। সদস্য দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ৬০ ভাগ মুসলিম এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বসবাস করে এ দেশগুলোয়। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বার্ষিক আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ ১২ শতাংশ আমদানি করলেও রপ্তানি করে মাত্র ৪ শতাংশ। ধর্মকে পুঁজি করে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের আটটি দেশ আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলেও বাণিজ্য সম্প্রসারণের নীতিতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারায় সদস্য দেশগুলোর আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে বৈষম্য কমাতে ডি-এইট কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 কর্মকর্তারা জানান, সাপটা, আপটা, বিমসটেক, টিপিএস-ওআইসিসহ আরও যেসব আন্তর্জাতিক ফোরাম রয়েছে, তার সব কটিতেই এলডিসি রাষ্ট্রগুলোর জন্য রুলস অব অরিজিনে ৩০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্ত রয়েছে। কেবল ডি-এইটেই এটি ৪০ শতাংশ। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এ ফোরামে ৪০ শতাংশ শর্ত মেনে নিলে অন্য আন্তর্জাতিক ফোরামের এলডিসি দেশগুলো চাপে পড়বে, যা আন্তর্জাতিক নীতির বিরোধী।
এ ছাড়া ডি-এইটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো আবার টিপিএস-ওআইসিতেও (ট্রেড প্রিফারেনশিয়াল সিস্টেম অ্যামং দ্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রি) রয়েছে। আর ওই ফোরামের চুক্তি অনুযায়ী এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ রুলস অব অরিজিনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের সুবিধা পাচ্ছে। ফলে একই দেশ নিয়ে দুটি পৃথক ফোরামের নীতি দুই ধরনের হলে যেটি সুবিধাজনক হবে বাংলাদেশ সেটিতেই বাণিজ্য করবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ডি-এইটের পিটিএ চুক্তিতে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। উপরন্তু এলডিসি দেশের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও চুক্তিতে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রুলস অব অরিজিনের শর্ত ৩০ শতাংশ করা আমাদের যে দাবি তা যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি।’ এ বিষয়টি ইস্তাম্বুলের সম্মেলনে কঠোরভাবে তুলে ধরা হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অন্য দেশগুলো তা যদি না মেনে নেয় তবে ডি-এইট ফোরাম তার কার্যকারিতা হারাবে। সে ক্ষেত্রে টিপিএস-ওআইসি ফোরামের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর