বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে বেড়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা একদিন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এক নম্বরে। আমরা চাই প্রত্যেকটি শিশু মানুষের মতো মানুষ হোক। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা মিলনায়তনে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদেরকে সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। তোমাদের মধ্যেই আগামী দিনের নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তাসহ, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং দেশ পরিচালনার যোগ্য প্রতিনিধি তৈরি হবে একদিন। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছি। আমরা বীরের জাতি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও কাছেই আমরা মাথা নত করব না। এই প্রত্যয় নিয়েই আজকের প্রজন্মকে প্রস্তুত হতে হবে আগামী দিনের জন্য।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিহত শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রাসেল আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট ছিল। তাকে নিয়ে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। আমি যখন জার্মানিতে চলে গেলাম ওকে (রাসেল) সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আব্বা তাকে ছাড়া থাকতে পারেননি। যদি আমি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে রাসেল আজ বেঁচে থাকত। ওর বয়স হতো আজ ৫০।
তিনি বলেন, প্রখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে আমার মা তার নাম রেখেছিলেন রাসেল। আব্বা দার্শনিক রাসেলের বই পড়ে তার দর্শন বোঝাতেন মাকে। ছোট ভাই রাসেলের অনেক অজানা কাহিনী স্মৃতির পাতা থেকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ও ছিল খুব চাপা স্বভাবের। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে যখন আমরা ২৮ নম্বরের দুই কক্ষের বাসায় অনেকটা বন্দী তখন রাসেল শুধু আব্বাকে খুঁজত। আব্বা কারাগার থেকে ফিরে আসার পর রাসেল তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আব্বাকে পাহারা দিয়ে রাখত। আব্বার কক্ষে মাঝে মধ্যেই উঁকি দিয়ে দেখত।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শৈশব স্মৃতি নাড়া দিয়েছিল রাসেলকে। সুযোগ পেলেই সে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসত। বাড়িতে আসার সময় গ্রামের ছেলেদের জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনে আনত। সবসময় খেলা করত গরিব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। টুঙ্গিপাড়ায় ওই বয়সেই তার একটি বিশাল বন্ধুমহল গড়ে ওঠে। সংগঠনের সভাপতি রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সদস্য সচিব মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, কে এম শহীদুল্লাহ, মুজিবুর রহমান হাওলাদার প্রমুখ।
 
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারকে হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটি ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে দেশকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ছিলেন, ক্ষমতার লোভে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিবারের দোষ কী ছিল? কী অপরাধ ছিল রাসেলের? তিনি দুঃখ করে বলেন, আজ যখন প্যালেস্টাইনের হত্যাকাণ্ড দেখি তখন আমার উপলব্ধি হয় কীভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল? তিনি বলেন, আমার আব্বা সারাজীবন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন আর আমরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
আলোচনা শেষে জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী ছাত্রছাত্রী ও রাসেল আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী দর্শক কাতারে বসে তা উপভোগ করেন।

সর্বশেষ খবর