বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শেরেবাংলানগর থানার এসআই গ্রেফতার ওসি প্রত্যাহার

শেরেবাংলানগর থানার এসআই গ্রেফতার ওসি প্রত্যাহার

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে ‘সাজানো বন্দুকযুদ্ধে’ শাহ আলম নামে এক ব্যবসায়ীর দুই পায়ে গুলি করার ঘটনায় শেরেবাংলানগর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন। প্রত্যাহার করা হয়েছে একই থানার ওসি আবদুল মমিনকে। গতকাল বিকাল ৩টায় আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যবসায়ী শাহ আলমের স্ত্রীর সঙ্গে এসআই আনোয়ার হোসেনের পরকীয়ার জেরে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত শাহ আলম বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লবকুমার সরকার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুলিবিদ্ধ শাহ আলমের ভাই মোস্তফা বাদী হয়ে এসআই আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে শাহ আলমকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় এসআই আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, শাহ আলম একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এর আগে সিএনজি অটোরিকশার মালিক ছিলেন তিনি। দুই বছর আগে মোহাম্মদপুর থানার গাড়িও চালিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে পুলিশের গুলিতে আহত হন শাহ আলম। শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ গুলিবিদ্ধ শাহ আলমকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় পুলিশের ভাষ্য ছিল- তালতলা এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় শাহ আলমসহ কয়েক সন্ত্রাসীকে আটকের চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। বন্দুকযুদ্ধে দলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেলেও শাহ আলমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অস্ত্রসহ আটক করা হয়। পরে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ আলমের পরিবার দাবি করে, পূর্বশত্রুতা ও পরকীয়ার জেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে শাহ আলমকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার পুরোটাই নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। ‘সাজানো বন্দুকযুদ্ধ’ ঘটনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে এসআই আনোয়ার বাদী হয়ে সোমবার শাহ আলম, কালাম, সিদ্দিকসহ অজ্ঞাত আরও তিন-চার জনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলানগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেন। তখন এসআই আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, শাহ আলম সন্ত্রাসী দলের সদস্য। এক অভিযানে ওই সন্ত্রাসী দলের সদস্যদের আটকের চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। বন্দুকযুদ্ধে দলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেলেও শাহ আলমকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। শাহ আলমের স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে মোহাম্মদপুর থানার গাড়ি চালাতেন শাহ আলম। তখন এসআই আনোয়ার মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। আর শাহ আলম স্ত্রী শান্তাসহ মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়িতে থাকতেন। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। দেড় বছর আগে শাহ আলমের অজ্ঞাতে শান্তা কেরানীগঞ্জে তার বাবার বাড়ির এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যান। যাওয়ার আগে তিনি শাহ আলমের সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেন। শাহ আলম নানাভাবে খোঁজাখুঁজি করে কেরানীগঞ্জের আরশিনগরে শান্তা যে বাড়িতে থাকেন তার সন্ধান পান। এরপর দেড় মাস আগে শাহ আলম জানতে পারেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে এসআই আনোয়ারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে এবং আনোয়ারের ভাড়া করা বাসায়ই তিনি থাকছেন। এরপর তিনি আরশিনগরে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের বিষয়টি অবহিত করে সুবিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে একাধিক সালিশ বৈঠকও হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে এক লোকের মাধ্যমে শাহ আলমকে ডেকে নিয়ে তার দুই পায়ে গুলি করে তাকে সন্ত্রাসী সাজিয়েছেন এসআই আনোয়ার।
আহত শাহ আলম জানান, রবিবার রাতে পারিবারিক একটি বিষয় মীমাংসার কথা বলে পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় নিয়ে যান।
সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া এসআই আনোয়ার তার চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলেন।
এরপর তালতলা এলাকায় নিয়ে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরা অবস্থায় দুই পায়ে গুলি করেন।
 প্রসঙ্গত, সিএনজি চালক শাহ আলমের (২৭) স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ঝামেলামুক্ত করতে রবিবার রাতে শাহ আলমের দুই পায়ে গুলি করেন শেরেবাংলানগর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। পরে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে শাহ আলমের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলাও করেন তিনি। বর্তমানে শাহ আলমকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর