শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

৯০ বছরের সাজা শেষ হলো ১৫ মাসেই

অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের। তবে শাস্তি মেয়াদভিত্তিক কারাবাস। বয়স বিবেচনায় এক অশীতিপরকে করুণার এই দণ্ড। এরপর সাজা ভোগ করতে থাকেন বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার বিরোধিতার প্রতীক’ গোলাম আযম। কিন্তু না, এরই মধ্যে ছন্দপতন। ৯০ বছর সাজার মাত্র ১৫ মাস অর্থাৎ ৪৬৫ দিন কারাভোগ করেই চিরতরে চলে গেলেন তিনি। এ দেশের ইতিহাসে আলোচিত-সমালোচিত একটি নাম- গোলাম আযম। বহুল বিতর্কিতও বটে। পলাশীর যুদ্ধে মীর জাফরের যে ভূমিকা, অনেকের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গোলাম আযমের ভূমিকা প্রায় একই। তবে পলাশীতে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা স্বাধীনতা হারালেও একাত্তরে এই ‘স্বর্ণমৃগ’ লাভ করে বাংলাদেশ। ১৭৫৭ সালে মীর জাফর ‘পারলেও’, ১৯৭১-এ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন গোলাম আযম। ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের শাহসাহেব বাড়িতে (নানার বাড়ি) জš§। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সংশ্লিষ্ট ছিলেন ভাষা আন্দোলনে। তবে যে মাটিতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সেই মাতৃসম ভূমির স্বাধীনতার সর্বাÍক বিরোধিতাও করেন তিনি। গণহন্তারক ও ধর্ষকদের পক্ষ নেন তিনি। এভাবে গোলাম আযম হয়ে গেলেন ‘জাতীয় খলনায়ক’। একাত্তরে দেশবিরোধী ভূমিকার জন্য কোনো অনুতাপ বা দুঃখবোধও হয়নি তার কোনো দিন। একাত্তরে তার ভূমিকার বিচার করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হন জামায়াতে ইসলামীর এই সাবেক আমির। একাত্তরের ভূমিকায় গোলাম আযম যেমন দুঃখ প্রকাশ করেননি, এ দেশের মানুষও তাকে ক্ষমা করেনি। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে বায়তুল মোকাররমের সামনে তার জুতাপেটার ঘটনা বেশ আলোচিত। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের ‘প্রতীক’। এ ছাড়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন প্রতীকী গণআদালত মৃত্যুদণ্ড দেন তাকে। শুধু গোলাম আযমই নন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চায়নি তার দল জামায়াতে ইসলামীও। এবার মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠন হিসেবে এই দলের বিচারের অপেক্ষা।
গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, কিন্তু হয়েছে। তিনি যে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাকে আবার আসতে হয়েছে এখানে। তাকে মরতে হয়েছে এই স্বাধীন বাংলাদেশেই। তাও একজন মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে, দণ্ডের বোঝা মাথায় নিয়েই। এটাই তার জীবনের ‘ট্র্যাজেডি’।

সর্বশেষ খবর