শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

যথাসময়েই নির্বাচন

সাজা মওকুফের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

যথাসময়েই নির্বাচন

গণভবনে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে যথাসময়ে। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যদিও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার যে কোনো সময় নির্বাচন দিতে পারে তবে আগামী নির্বাচন হবে সময়মতোই। সাজা মওকুফের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা তো আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। বিএনপি নেত্রীকেও আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পান। জনগণ ভোট দেবে না জেনেই তারা সেদিন নির্বাচনে আসেননি। পদে পদে ব্যর্থ বিএনপি সব ক্ষেত্রেই সরকারের ব্যর্থতা খুঁজে বেড়ায়।’ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মানবাধিাকার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এত উদ্বেগ কেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো ইউরোপে এখনো হচ্ছে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যুদ্ধাপরাধীদের পেলেই তারা ধরে নিয়ে এসে বিচার করছে। নিজেদের হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনো বাধা নেই আর আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তাদের এত উদ্বেগ! আমাদের দেশের মানুষ কি মানুষ নয়?’ যুদ্ধাপরাধীদেরর বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের আইনে এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এ নিয়ে ইউরোপয়ি ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করে অথচ গাজা, প্যালেস্টাইনে যখন নারী আর শিশুদের ওপর ইসরাইলের সৈন্যরা নির্মম হামলা চালায় তখন তাদের মুখে তো মানবাধিকার নিয়ে কথা শুনি না। আরব আমিরাত সফরকালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আপনার কোন আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আমাদের আলোচনায়ও বিষয়টি আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমণ করবো, জঙ্গিবাদ নিমুল করবো। আর এগুলো করতে হলে যুদ্ধাপরাধীর বিচারও করতে হবে। এ বিচার চলবে।
৫ জানুয়ারীর আগে আপনি নাকি বলেছিলেন এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিবেন- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি খুব স্বাভাবিক একটি নির্বাচন হলে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তীতে আরেকটি নির্বাচন। আমি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কথা বলেছি এখন আমার এই বার্তাটি যে যেভাবে বুঝেছে সেভাবেই তারা কথা বলছে। কিন্তু জনগন তো ৫ বছরের জন্যই একটি সরকার গঠনে ভোট দিয়েছে তাই নির্বাচন হবে যথাসময়েই। ভারতের গণমাধ্যমগুলো সম্প্রতি গুরুত্ব দিয়ে যে খবরটি প্রকাশ করছে তাহলো সে দেশে জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হয়ে আপনিসহ বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার নীলনকশা করছে। এটি দেশের নাগরিক হিসাবে আমরাও উদ্বিগ্ন। আপনি কতটা উদ্বিগ্ন? বেসরকারি টিভির এক সিনিয়র সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি উদ্বিগ্ন নই। কারণ আমার তো এখন এক্সটেনডেড লাইফ চলছে। জীবনের ওপর হামলা এসছে বার বার। ১৯৮১ সাল থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বার বার আমাকে মেরে ফেলতে হামলা চালানো হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে। অনেক আগেই মারা যেতে পারতাম। জন্মেছি যখন মরতে হবেই- এই চিরন্তন সত্যকে ধারন করেই রাজনীতি করছি। আমি এটিও বিশ্বাস করি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়ে এই দেশের যতটা কাজ করার সূযোগ রেখেছেন তা শেষ হওয়ার আগে আমি মরবো না। এটি আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশকে যেদিন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করতে পারবো সেদিন আমার ছুটি। তার আগে নয়। আগামী ২০২১ সালের আগেই দেশ মধ্যাআয়ের দেশে পরিণত হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন আর জঙ্গীরা তো চেষ্টা চালাতেই পারে একটি সহিংসতার। আমাদের জীবননাশের চেষ্টাও করতে পারে । এজন্য ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে একযোগে কাজও করছে।  সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে উপবিষ্ট ছিলেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাস কল্যান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রীর আরব-আমিরাত সফর ব্যর্থ হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জনগণ ভোট পাবে না জেনে নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হলো। নির্বাচন ঠেকানো জন্য আন্দোলনের হুমকি দিয়ে মানুষ হত্যা ও জানমালের ক্ষতি করলো। ৫০০ স্কুল পোড়ালো, পুলিশ ও  পিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করলো। যারা প্রতি পদেপদে ব্যর্থ তারা তো ব্যর্থতাই দেখবে। এটা তাদের মজ্জাগত। তারা তাদের ব্যর্থতা দেখুক, আমি আমার কাজ করবো। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, আগামীতে যদি কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা বর্তমান সংবিধানের আইনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার ফলে খালাস পাবে- এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা করা যাবে না। কারণ আমরা একটি রাষ্ট্র চালাই, রাষ্ট্রপতির কাছে দেশের জনগণের একটি অধিকার থাকে। কাজেই নাগরিকের অধিকার দেখা-মহামান্য রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা খর্ব করা ঠিক হবে না।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তারা যেন অবৈধভাবে না যায়। আমরা তো দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। তিন-চার লাখ টাকা দালালকে দিয়ে বিদেশে না গিয়ে তো দেশেই ওই টাকা দিয়ে কাজ করতে পারে। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে যুবকদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নিলে মানুষ আÍঘাতী পথে এগোবে না। তিনি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিরও নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর