শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঢিলেঢালা হরতালে প্রথম দিন স্বাভাবিক

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে। আজ শুক্রবার ভোর ৬টায় ২৪ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শেষ হবে। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতেও গতকাল হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি। শুরুতে রাজধানীর রাস্তায় যানবাহন চলাচল কিছুটা সীমিত থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে থাকে। ঢাকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নিত্যদিনের মতো যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল ভোর থেকে রাজধানীর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। ঢাকার বাইরে থেকেই সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্তঃজেলার কোনো বাস আসেনি। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে দেশের বিভিন্নস্থানে যাত্রীবাহী যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হরতাল বিরোধীরাও মাঠে ছিল সোচ্চার। নাশকতা চালানোর অভিযোগে পুলিশ বিভিন্নস্থান থেকে আটক করেছে জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক কর্মীকে। এদিকে গতকাল জামায়াতের পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান দাবি করেন, হরতালের প্রথম ধাপে দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের ১০৯৫ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ছয় কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পেট্রল বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বেশ কিছু দলীয় আদর্শভিত্তিক বই জব্দ করা হয়। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে লালবাগ ছাপড়া মসজিদ এলাকায় মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে চার জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ফুটপাতে রাখা কিছু মালামালে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে সটকে পড়ে। হরতালের সমর্থনে মগবাজার রেলগেটে রাস্তা অবরোধ করে জামায়াত নেতা-কর্মীরা। বেলা ২টার দিকে রাজধানীর কদমতলীর আলীবহর এলাকায় বোরাক পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ ঘটনায় দুই যাত্রী আহত হয়। দুপুরে হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে বলে র‌্যাব-২। বগুড়ায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। শহরের পিটিআই মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ পাঁচ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে হরতাল সমর্থনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অপরদিকে শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ নাশকতার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের ১৫ জনসহ বিভিন্ন মামলায় ৮৭ জনকে গ্রেফতার এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। লক্ষ্মীপুর শহরের আলিয়া মাদ্রাসা, মিয়া রাস্তার মাথায়, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন সড়কে বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে হরতাল পালন করছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ দিকে জেলা সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর থেকে নাশকতার চেষ্টাকালে জামায়াত-শিবিরের ২৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মো. কামরুজ্জামানসহ জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতাকে আটক করা হয়। সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করে। দোকানপাট, বিপণি বিতান ও পোশাক কারখানা খোলা ছিল। হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের দুটি রুটে ডেমু ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। আগামী রবি ও সোমবারও ট্রেন দুটির চলাচল বন্ধ থাকবে। সকাল ৬টায় বরিশাল নগরীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে মহানগর শিবির কর্মীরা। সকাল সোয়া ৬টার দিকে নগরীর উত্তর সাগরদী নলী দাসের পুল এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ঝটিকা বিক্ষোভ করে মহানগর জামায়াতের কয়েকজন কর্মী। এর আগে নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় বুধবার রাতে নগরী থেকে জামায়াতের ২ জন ও শিবিরের একজন এবং আগৈলঝাড়া উপজেলায় এক শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। ফেনীতে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়। কুমিল্লা সদরের ধর্মপুর এলাকায় টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ, মহানগরীর লাকসাম রোড, নজরুল এভিনিউ, রাজগঞ্জ ও ধর্মপুর থেকে রানীর বাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামে অনেকটাই নিরুত্তাপভাবে পালিত হয় হরতাল।
সোচ্চার ছিল হরতালবিরোধীরা। তবে নাশকতার অভিযোগে পুলিশ নগর ও উপজেলা থেকে ১১ জনকে আটক করেছে। নগরীর খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকায় হরতালের সমর্থনে বের হওয়া ঝটিকা মিছিল থেকে মো. ফখরুদ্দিন (২৩) নামে এক শিবির নেতাকে আটক করে পুলিশ। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ১০ কর্মীকে আটক করে। বুধবার মধ্যরাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত নগরীর আটটি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ২৬ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। লালমনিরহাটে জামায়াত-শিবিরের ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। বুধবার রাতে লালমনিরহাটের পাঁচ থানার পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বইসহ নয় শিবিরকর্মীকে আটক করে পুলিশ। মানিকগঞ্জে আট জামায়াত কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে জাগীর এলাকার একটি মসজিদ থেকে জামায়াত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া  একই অভিযোগে গতকাল হরিরামপুর থেকে দুজন, সাটুরিয়া থেকে দুজন, সিংগাইর থেকে একজনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। সিলেটে সকাল ৯টায় শহরতলির তেমুখীতে রাস্তার উপর বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ করে। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও করে। এ ছাড়া নগরীর আম্বরখানা ও দরগা গেটসহ কয়েকটি এলাকায় মিছিল করে জামায়াত-শিবির। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে অন্তত ১০টি ট্রাক ও একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেছে হরতালকারীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। নওগাঁয় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক অবরোধ করে নওগাঁ জেলা জামায়াত। টাঙ্গাইলে হরতালবিরোধী একটি মিছিল বের করে জেলা আওয়ামী লীগ। ঝটিকা মিছিল ও রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জে পালিত হচ্ছে। সকালে সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কের সমাজকল্যাণ মোড়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিক্ষোভ করে।
এদিকে ফাঁসির রায় ঘোষণায় আনন্দ-মিছিল করেছে গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা। অন্যদিকে, জামায়াতের ডাকা হরতাল প্রত্যাখ্যান করে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। হরতালের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হরতালের প্রতিবাদে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ-মিছিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। কুড়িগ্রামে হরতালবিরোধী মিছিল বের করে জেলা আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর