শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
রায় ফাঁস

আত্মসমর্পণের পর সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ছেলের জামিন

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ‘রায় ফাঁসের’ মামলায় তার স্ত্রী ও ছেলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম সামছুল আলম এ আদেশ দেন। এর আগে আসামিদের পক্ষে আদালতে জামিন চেয়ে শুনানি করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোসলেহ উদ্দিন জসীম। এ সময় জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম শামীম। এদিকে এ মামলার আসামি ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন মামলাটি অধিকতর তদন্ত চেয়ে অবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, যে ওয়েবসাইট থেকে রায়টি ফাঁস করা হয়েছে তার মালিক কে, কে রায়টি পোস্ট করেছিল, যে বা যারা রায়টি পোস্ট করেছিল তাদের কাছে কে পাঠিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে কিছুই উল্লেখ করেননি। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব বিষয় অধিকতর তদন্ত করা প্রয়োজন। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহজাহান ২৮ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের ও ছেলে হুম্মাম কাদের ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি হলেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান, সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী ও ফারুক হোসেন। এরপরে আদালত ১২ অক্টোবর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক আসামি ফারহাত, হুম্মাম ও মেহেদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। মামলার আসামি নয়ন ও ফারুক ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত বছরের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায় ঘোষণার আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবী রায় ফাঁসের অভিযোগ করে ‘রায়ের খসড়া কপি’ সংবাদকর্মীদের দেখান। এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ টি এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুক ও নয়ন এবং ব্যারিস্টার ফখরুলের সহকারী মেহেদীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়- মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ঘোষণার আগেই রায়ের কপি তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের দেখান। মামলার পরপরই গ্রেফতার করা হয় ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নয়ন আলী ও সাঁটলিপিকার ফারুক হোসেনকে। পরে গত বছরে নয়ন ও ফারুক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়- মিডিয়ায় রায় প্রকাশ হওয়ার পরে ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নয়ন আলী মেহেদী হাসানের চেম্বারে যান এবং রায় কীভাবে ফাঁস হলো জানতে চান। তখন মেহেদী হাসান জানান, রায়ের কপি তার কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে গেছে। পরে তারাই অনলাইনে এ রায় ফাঁস করেছেন। নয়ন আলীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া বলা হয়- আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশ-বিদেশে বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করতেই কৌশলে রায়ের কপি সংগ্রহ করে তা এমএস ওয়ার্ড থেকে পিডিএফে রূপান্তর করে অনলাইনে প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ খবর