শিরোনাম
বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সীমাহীন দুর্ভোগে মানুষ

চলছে না দূরপাল্লার বাস, দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের

আবারও রাজনীতির দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দায় চেপেছে সাধারণ মানুষের কাঁধে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকে অবরোধে গতকাল রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও সারা দেশের সঙ্গে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে চলাচল করছে নগরবাসী।

সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাতায়াত করা গেলেও ভিড় ছিল অস্বাভাবিক। বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যে দূরপাল্লার পাশাপাশি নগর পরিবহনের বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সকালে অবরোধ শুরুর পর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়েও কোনো বাস যাওয়া-আসা করছে না। তবে হিউম্যান হলার, অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন চলাচল করছে। গাবতলী, ফার্মগেট, মিরপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে গণপরিবহনের অপেক্ষায় স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে হাজারো মানুষ। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পিকআপ, রিকশা, ভ্যান কিংবা হেঁটে যে যেভাবে পেরেছেন ছুটেছেন গন্তব্যে। হিউম্যান হলার আর দু-একটি গণপরিবহন চলাচল করলেও তাতে ঠাঁই মেলেনি বেশিরভাগ যাত্রীরই। বাস না থাকায় ভিআইপি সড়কগুলোও ছিল সিএনজি অটোরিকশা আর রিকশা-ভ্যানের দখলে। যাত্রীরা জানান, রিকশায় ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করে তবেই গাড়িতে উঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

২০-দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাঁচামালসহ নানা পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো আটকে পড়েছে। এরইমধ্যে রাজধানীর বাজারে পণ্য সামগ্রীর সংকট শুরু হয়েছে। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে পাইকারি বাজারে খোলা সোয়াবিন, পিয়াজ, ডাল, আদার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, দাম বেড়েছে শাক-সবজি ও চালের। পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরবরাহ না থাকায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পরিবহনের অভাবে আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের গাবতলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর বলেন, সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি গাবতলী ছেড়ে যায়নি। তবে কিছু লোকাল গাড়ি চলছে। সকালে গাবতলী টার্মিনালে এবং সামনের রাস্তার দুই পাশে অনেক বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা গেছে। যাত্রী কম থাকায় সদরঘাটেও অন্য দিনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম লঞ্চ চলছে। বিআইডবি্লউটিএর টিআই মাহফুজুর রহমান জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগের রাতে ছেড়ে আসা ৩৯টি লঞ্চ ভোরে ঢাকার সদরঘাটে ভিড়ে। আর সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় চারটি লঞ্চ। তবে সকালে সদরঘাটে পেঁৗছে যানবাহন না পেয়ে অনেক যাত্রী গন্তব্যে পেঁৗছতে সমস্যায় পড়েন। অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম দেখা যায়। বিভিন্ন সড়কে অটোরিকশা, হিউম্যান হলার ও রিকশা চলাচল করলেও বাস না পেয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অফিসগামী যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বহু মানুষ হেঁটেই গন্তব্যে পেঁৗছানোর চেষ্টা করেছেন। রাজধানীর রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট-বিপণিবিতান ছিল বন্ধ। অনেক এলাকায় অলিগলির দোকানপাটও বন্ধ দেখা গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ব্যাংক-বীমা খোলা থাকলেও লেনদেন হয়েছে খুব কম। রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে এরইমধ্যে অবরোধের ধকল পড়তে শুরু করেছে। কারওয়ানবাজারে সোমবার রাতে হাতেগোনা কিছু পণ্যবাহী ট্রাক এসে পেঁৗছলেও বেশিরভাগ ট্রাক বিভিন্ন রাস্তায় আটকা পড়ে। ফলে কাঁচা সবজি নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাংঘর্ষিক রাজনীতির নির্মম দায় সরাসরি এসে পড়ছে ব্যবসায়ীদের কাঁধে। প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে ভ্রুক্ষেপ নেই রাজনীতিবিদদের। অবরোধে একদিকে যেমন যান চলছে না, অন্যদিকে জরুরি প্রয়োজনে কয়েক গুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রত্যেককে। চাকরিজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর প্রত্যেককেই নিতে হচ্ছে এই সহিংস রাজনীতির দায়। সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল ভিড়। প্রতিটি ট্রেনেই বসা বা দাঁড়ানোর ঠাঁই ছিল না। রাজধানীতে অতি প্রয়োজনে বেরিয়ে আসা মানুষজনের চোখে-মুখেও ছিল আতঙ্কের ছাপ। কখন কি হয়, কখন ঘটে হামলা-সহিংসতা এমন আশঙ্কায় ছুটেছে মানুষ গন্তব্যে।

সর্বশেষ খবর