বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবরুদ্ধ খালেদা কেমন আছেন

অবরুদ্ধ খালেদা কেমন আছেন

রাজধানীর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত তিন দিন ধরে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ও গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তার শ্বাসকষ্টজনিত ও ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা রয়েছে। এ কারণে ঠিকমতো গত দুই দিন ধরে খাওয়া-ধাওয়াও করতে পারছেন না। সকাল-বিকাল ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুনের কাছে শারীরিক চেকআপও করাতে হচ্ছে তার। গুলশান কার্যালয়ের রান্নার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে আনা খাবারও খাচ্ছেন বেগম জিয়া। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিপার স্প্রের ঝাঁজ থেকে উদ্ভূত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এসব কারণে বিএনপি প্রধানের ঠিকমতো ঘুমও হচ্ছে না। তবে এত কষ্টকর পরিস্থিতিতেও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন ২০-দলীয় জোটের এই প্রধান।  বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান গতকাল রাতে সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তার নামে ভয়ঙ্কর ‘পিপার স্প্রে’ নিক্ষেপের কারণে বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ‘বেগম খালেদা জিয়া শ্বাসকষ্টজনিত রোগ এবং ঠাণ্ডার রোগে ভুগছেন। আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে তিনি বেশ কয়েকবার বমিও করেছেন। কিছুক্ষণ পরপর তার চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে।’ যোগ করেন তিনি। জানা গেছে, গতকাল গুলশান কার্যালয়ে রান্না করা খাবার খেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সকালে ডিম পরোটা ও সবজি দিয়ে নাস্তা করেন। দুপুরে অল্প ভাত-ডাল ও সবজি দিয়ে খাবার খান। রাতেও প্রায় একই খাবার খান সাবেক এই বিরোধীদলীয় নেতা। বেগম জিয়া খুব সামান্যই খাবার খান। তারপর অসুস্থতার কারণে আরও খাবার কমে গেছে।
কখনো কখনো গুলশানের বাসা থেকে, আবার কখনো হোটেল থেকে খাবার আনা হয় গুলশান কার্যালয়ে। সেগুলোর বেশির ভাগই খাচ্ছেন সেখানে অবস্থানরত কার্যালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারি ও নিরাপত্তা কর্মীরা। আর বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমিত আহার করছেন তাঁর প্রতিদিনের রুটিনের ভেতরেই। এরমধ্যে গত সোমবার বিকেলে পুলিশের ছোঁড়া পিপার স্প্রের ঝাঁঝে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টীম গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং নির্দেশনা দেন। ভোররাত পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে সময় কাটাচ্ছেন এবং ফজরের নামাজ শেষে ঘুমাতে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল তৃতীয় দিনের মত অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। সকাল নয়টায় ঘুম থেকে উঠেন তিনি। এরপর চা-নাস্তা সেরে দৈনন্দিন কাজ শুরু করেন তিনি। দুপুরের পর তাবলীগ জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ব ইজতেমার দাওয়াত পৌঁছে দেন এবং তিনি তা কবুলও করেন। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে দেখা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ। এ সময় বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর। সাক্ষাৎ শেষে এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘গুরুতর’ অসুস্থ। তিনি উঠে বসতেও পারছেন না। শরীরের বাম পাশে প্রচণ্ড ‘ব্যাথা’। ডাক্তার  দেখাচ্ছেন, ওষুধ খাচ্ছেন। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে তার। বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এমাজউদ্দীন আহমদ। প্রায় পৌণে দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পর পৌণে ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পান তিনি। তার সঙ্গে আরো ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. রাশেদুল হাসান।
গুলশানে অবরুদ্ধ থাকলেও গতকাল কার্যালয়ের আশপাশ এলাকায় আগের দিনের (সোমবার) চেয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল অনেক কম। বালি ও ইটের সুরকি ভর্তি ট্রাকের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলা হয় কার্যালয়ের সামনে থেকে। শুধু রাস্তার একপাশে সিটি কর্পোরেশনের দু’টি ময়লার গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কয়েকটি পিকআপ ভ্যান, জিপ গাড়ি ও মাইক্রোবাস রাখা ছিল আড়াআড়িভাবে।
বেগম জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক এমপি আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, বিলকিস ইসলাম, ফারজানা রহমান হুসনাসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মী।
তাবলীগের দাওয়াত : তাবলীগ জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল ‘অবরুদ্ধ’ বিএনপি চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনান্তে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বেগম জিয়া আখেরী মোনাজাতে শরিক হবেন আশা প্রকাশ করেন।
তিন সদস্যের তাবলীগ জামাতের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরাসরি দেখা না পেলেও তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের আমন্ত্রণ বার্তা পৌঁছে দেন। চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকেও আমন্ত্রণ গ্রহণের তথ্য জানানো হয়। তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বী মাওলানা আব্দুর রহিম নকীবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসেন।
নয়াপল্টন শুনশান : দুইদিনের মতো গতকালও রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তার আশপাশে ছিল শুনশান নীরবতা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিনভর তালা ঝুলানো ছিল। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দুইবার অফিসের দু’জন স্টাফ ফিরে প্রধান ফটক থেকে আসেন। তিন দিন আগে পুলিশের দেওয়া তালা ঝুলছিল অফিসটির প্রধান গেটের মুখে। কোনো নেতাকর্মীর উপস্থিতি না থাকলেও অফিসের সামনে ও আশপাশের এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল আগের মতই লক্ষ্যনীয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অনেকটা অলস সময় কাটান।

সর্বশেষ খবর