বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

আটক হতে পারেন খালেদা

সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী

আটক হতে পারেন খালেদা

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জঙ্গি তাণ্ডবের উসকানিদাতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। কোনো উসকানিদাতাকে আমরা ছাড় দেব না। হত্যা মামলা হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হতে পারে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। হাসানুল হক ইনু বলেন, শাহজাহানপুরে পাইপের ভেতরে শিশুর মৃত্যুর জন্য যদি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়, তাহলে গত তিন বছর যে জঙ্গি তাণ্ডব দেশে ঘটেছে তার দায়-দায়িত্ব কার? খালেদা জিয়া কি উসকানিদাতা নন? মন্ত্রী বলেন, সিএনজিতে একই পরিবারের তিনজন অগি্নদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে খালেদা জিয়া হত্যা মামলার মুখোমুখি হবেন। এই হত্যা মামলার জন্য তিনি প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে কিনা?- জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মামলা হলে গ্রেফতার হতে পারেন। তিনি বলেন, কেউ অপরাধ করলে সরকার পদক্ষেপ নেয়। অপরাধের ভিত্তিতে শুধু তিনি (খালেদা জিয়া) নন, যে কোনো মানুষ গ্রেফতার হতে পারেন। মামলার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। ঢাকায় ব্যাপক গোলযোগ হবে, সরকার পতন হয়ে যাবে- এমন গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি ব্যাপক সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত, নাশকতার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুই দিন আগে থেকেই বোমাবাজি ও গাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, একদিকে বেগম খালেদা জিয়া বাসভবন ছেড়ে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে তার পুত্র লাদেনীয় কায়দায় ভিডিও বার্তায় দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশ, ঢাকার এক অংশ থেকে আরেক অংশকে বিচ্ছিন্ন করার উসকানি দেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, একজন নেতা, একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিলাষকে প্রশ্রয় দিয়ে সরকার জনগণ ও জনগণের জানমালকে নিরাপত্তাহীনতায় রাখতে পারে না। হাসানুল হক ইনু বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তুলনামূলকভাবে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ভোটারদের কম অংশগ্রহণ হয়েছে- এটা সত্য। কিন্তু এর জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন, ১৪ দল বা মহাজোট দায়ী নয়। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোটের নির্বাচন বর্জন, নির্বাচন বানচাল করার অপচেষ্টাই দায়ী। তিনি বলেন, ৫ তারিখের নির্বাচন নির্বাচন নয়, সংসদ এবং সরকার অবৈধ- এ বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই। বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ তারিখের নির্বাচন মানতে হবে। সংসদের বৈধতা মানতে হবে, নির্বাচিত সরকারের বৈধতা মানতে হবে। ৫ তারিখের নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্তের জন্য তিনি দায়ী। তিনি বানচাল করতে পারেননি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে কথাটা তিনি যদি স্বীকার না করেন তাহলে বুঝতে হবে বেগম খালেদা জিয়া স্বাভাবিক-সাংবিধানিক রাজনীতির পথে হাঁটতে নারাজ। তথ্যমন্ত্রী বিএনপি প্রধানের সাত দফার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি সাত দফায় অতীতের ভুল স্বীকার করেননি, অতীতের ভুল রাজনীতির জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাননি। বরং জ্ঞানপাপীর মতোই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছেন। যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিদের সঙ্গে দোস্তির রাজনীতি ত্যাগের কথা বলেননি। আলোচনার নামে তার যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিদের রাজনীতিকে হালাল করার ফাঁদ পেতেছেন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্রে যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বা জোটের কখনোই আলোচনা বা সমঝোতা হতে পারে না। আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে সরাসরি জঙ্গিবাদী, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে অবস্থান কি- তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। তাকে আগে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া আগের পাঁচ বছরেও অবস্থান পরিষ্কার করেননি, গত এক বছরেও করেননি। যতক্ষণ পর্যন্ত জঙ্গিবাদী, জামায়াত, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার অবস্থান পরিষ্কার না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি হয়েই থাকবেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মূল এজেন্ডা নির্বাচন বা আলোচনা নয়। তার মূল এজেন্ডা হচ্ছে রাজাকার ও জঙ্গিদের ইজারা দিয়ে সিংহাসন অবৈধভাবে দখল করার চক্রান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া মুখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে কার্যত তিনি একটা অস্বাভাবিক কর্মসূচির পাঁয়তারা সৃষ্টি করেছেন। এ অবস্থায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি অতীতে যেভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের গ্যারান্টি দিয়ে সমাবেশ করেছেন, এভাবে যদি গ্যারান্ট্রি দিতে পারতেন তাহলে অবশ্যই তাকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হতো এবং যেখানে খুশি সেখানেই তিনি সমাবেশ করতে পারতেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার সবার থাকবে। সোমবারও বিএনপি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন, তাকে উসকানি দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। কোনো উসকানিদাতাকে আমরা ছাড় দেব না।

ইটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়নি : হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সম্প্রচার বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত সরকার দেয়নি। একুশে টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কোনো নির্দেশ প্রদান করা হয়নি। কোনো পাড়া-মহল্লায় একুশে টিভি দেখা না যাওয়ার পেছনে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এটা শুনেছি, আমরা খতিয়ে দেখতে পারি। অবশ্য এখন পর্যন্ত একুশে টিভি কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ কামনা করেনি। তথ্যমন্ত্রী জানান, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে কানিজ ফাতেমা নামে এক নারীর দায়ের করা মামলায় একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একুশে টেলিভিশনের অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান 'একুশের চোখ'-এর একটি পর্ব নিয়ে ওই নারী এই মামলা করেন বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

 

 

সর্বশেষ খবর