বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

খালেদা সে রাতে পল্টন থাকতে চেয়েছিলেন

পীর হাবিবুর রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনের অফিসে যেতে চেয়েছিলেন সেই রাতে। চেয়েছিলেন ৫ তারিখের সমাবেশ ঘিরে পার্টি কার্যালয়ে অবস্থান নিতে। তাই শনিবার রাত ১১টার পর গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়েছিলেন পল্টনের কার্যালয়ে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যাওয়ার উছিলায়। পল্টন কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। খাটও নেওয়া হয়েছিল কয়েক দিন আগে। সরকার সমাবেশের অনুমতি দেবে না এই আশঙ্কা থেকেই বিএনপি নেত্রী পল্টন কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে নেতা-কর্মীদের ৫ জানুয়ারি সেখানে সমবেত হওয়ার ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। ওইখানে তিনি অবস্থান নিলে জামায়াত-শিবিরসহ জোট শরিকদের কর্মীরাও পুলিশি বাধা অতিক্রম করে যেতে চাইবে এবং এতে চতুর্দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়বে- এমন আশঙ্কা থেকেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে রাতে গুলশান কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। গুলশান কার্যালয় থেকে ওইদিনই বেগম খালেদা জিয়ার পল্টনের কার্যালয়ে রাতে গিয়ে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনাটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চলে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ওপর মহল থেকে তাকে সেখানেই অবরুদ্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই রাতেই খালেদা জিয়াকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল তিনি চাইলে তার বাসভবনে যেতে পারেন। পরদিন ৪ জানুয়ারি গণভবনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে তিনিও বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিএনপি নেত্রীকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। তিনি চাইলে তার বাসভবনে যেতে পারবেন। কিন্তু এদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শনিবার রাতেই খবর এসেছিল গুলশান বাসভবনে যেতে চাইলে পথ থেকেই তাকে সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে সরকার পক্ষ ভর্তি করে দেবে। তাই তিনিও গুলশানের কার্যালয়েই রাত যাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং অবরোধের মুখে পড়েন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি'-তে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ রুখতে সরকার একইভাবে গুলশানের বাসভবনে তাকে অবরুদ্ধ করেছিল ট্রাকভর্তি বালুর বস্তা দিয়ে। সেবার ছিল ৫টি ট্রাক। এবার বালুর ট্রাকের সঙ্গে শুধু ইটের ট্রাকই যুক্ত হয়নি সংখ্যা ছিল ১৩টি। সেই সঙ্গে র্যাব-পুলিশের ব্যাপক সমাগমই ঘটেনি, গাড়ির সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় চত্বর, শাপলা চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইলেও তাদের টার্গেট ছিল পল্টনের কার্যালয়। পল্টনের কার্যালয় ঘিরে সরকারের যেমন নজর ছিল তেমনি বিএনপি নেতৃত্বেরও ইচ্ছা ছিল সমাবেশ করতে পারলেও সব দলের অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পার্টি কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনড় অবস্থান নিতেন এবং সরকারি বাধা এলেই লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি দিতেন। সরকারের ওপর মহলে খবর চলে যাওয়ায় তারা হার্ডলাইন নিতে বাধ্য হন। বেগম খালেদা জিয়া এখন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েই অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তবে বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে এই অবরোধে বিরতি আসছে। এদিকে নানা সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান সাম্প্রতিককালে সরকার ও বিএনপির মধ্যে নতুন করে তিক্ততার সৃষ্টি করেছেন বলে সরকারের ওপর মহলই নয়, পর্যবেক্ষকরাও মনে করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে আজগুবি বক্তব্য আর বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে ওজনহীন কথাবার্তা সরকার ভালো নজরে নেয়নি। বিএনপির একটি বড় অংশকেও তার এই দায়িত্বহীন ইতিহাস বিকৃতি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বিঘ্নে কুমিল্লা-নারায়ণগঞ্জসহ নয়টি জায়গায় জনসভা করতে দিলেও গাজীপুরে এসে তার ছন্দপতন ঘটে। ২৯ ডিসেম্বর গাজীপুরের সমাবেশে খালেদা জিয়ার যাওয়ার কথা ছিল। তারেক রহমানের উন্নাসিক কথাবার্তা শাসক দলকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তখন ছাত্রলীগ পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়ে ঘোষণা করে, তারেক রহমান নিঃশর্তে ক্ষমা না চাইলে কোথাও বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেবে না। এখান থেকেই রাজনৈতিক বিভক্তির তিক্ত উত্তেজনা নতুন করে দেখা দেয়। গাজীপুরে বিএনপি আর সমাবেশ করতে পারেনি ১৪৪ ধারা জারি করার মধ্য দিয়ে। ঢাকার সমাবেশটিও একই কায়দায় রুখে দেওয়া হয়। মাঝখানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হয়েছেন গ্রেফতার, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সহিংস রাজনীতিতে প্রাণহানির ঘটনাই ঘটেনি, অর্থনৈতিক লোকসানের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। পর্যবেক্ষকরাও বলতে পারছেন না রাজনীতিতে নতুন করে দেখা দেওয়া এই সংঘাতের শেষ কোথায়।

সর্বশেষ খবর