সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

অসহযোগ আন্দোলনের চিন্তা

গ্রেফতার এড়াতে কৌশলী হতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশ

‘অর্থবহ’ সংলাপের মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসন না হলে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেই যাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। চলতি সপ্তাহ থেকে আন্দোলনের পরিধি আরও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনাও চলছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অবরোধের সঙ্গে হরতাল যুক্ত হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে যে কোনো দিন এ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এড়াতে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া    হয়েছে। জানা গেছে, সরকার নতুন নির্বাচনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ না নিলে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এ ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বিভিন্ন মহল থেকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা নিয়ে বিবেচনার জন্য চাপ রয়েছে। বেগম জিয়া সংশ্লিষ্টদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তার সিদ্ধান্তে অনড়। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে ২০ দল। তিনি জোটের নেতা-কর্মীদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জোর নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলন কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসবে। এ মুহূর্তে আন্দোলন থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই।’ সূত্র জানায়, জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে কৌশলে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে কোনোভাবেই আন্দোলন থেকে সরে আসা যাবে না বলেও সংশ্লিষ্টদের তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার হলে মধ্যম সারির নেতাদের দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। একইভাবে মধ্যম সারির নেতাদের ওপর গ্রেফতারের খড়গ এলে তৃণমূল নেতা-কর্মীকে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের। বিষয়টি মাথায় রেখেই আন্দোলন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কোনো কারণে তিনি গ্রেফতার হলে পরে কারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন তাও তিনি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের প্রতি প্রয়োজনীয় বার্তা ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দলের প্রবীণ একাধিক নেতার সঙ্গে এ নিয়ে বেগম জিয়ার কথাবার্তাও হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার হলে দলে ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে তার। নতুন আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘একটি জনসভা ঘিরে সরকার দেশে যে সংকট তৈরি করল, তার দায়দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। অবৈধ সরকার যে জনগণকে ভয় পায় তারই নমুনা হলো বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা। কিন্তু অতীতেও তারা গুম, খুন, হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এবারও পারবে না।’ ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ‘শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘সরকার সংকট নিরসনে উদ্যোগ না নিলে, তা হবে গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
ঢাকায় আন্দোলনের পরিধি বাড়ছে : চলতি সপ্তাহ থেকেই রাজধানীতে আন্দোলনের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুদফা ইজতেমার কারণে ঢাকায় কর্মসূচিতে শিথিলতা আনা হয়। তবে আজ থেকে ঢাকার নেতাদের কৌশলে কর্মসূচি জোরদার করার জন্য বিএনপি প্রধানের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহানগরের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। সূত্রমতে, এ দফায় ঢাকায় আন্দোলনে বেশি সক্রিয় ছিলেন নেতা-কর্মীরা। মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা সমর্থিত নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং ২০ দলের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করছে মহানগর বিএনপি। মির্জা আব্বাস, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, হাবিব-উন নবী খান সোহেল আড়ালে থেকে আন্দোলন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর