সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপি নেত্রী অবরোধ নাটক করছেন

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারা দেশে অবরোধ-হরতালে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম এম হান্নানসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী  নিজেই নিজেকে অবরোধবাসিনী করে অবরোধ নাটক করছেন। তিনি আরও বলেন, মানুষ খুন, বোমা মারা, ধ্বংসাত্মক কাজ করা, গাড়ি পোড়ানো- এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আর এ ধরনের সন্ত্রাসীদের যেখানে পাওয়া যায় ধরতে হবে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এই নীতি বিশ্বাস করেন- তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপি তাদের হাহাকারের আগুনে দেশ জ্বালিয়ে দিতে চান। তারা সংসদেও নেই, বিরোধী দলেও নেই বলে তাদের মধ্যে হাহাকার। তাই তারা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলাও রেহাই পাচ্ছেন না।
বিএনপির অবরোধ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অবরোধবাসিনী করে অবরোধ করছেন। ওনার বাসা রেখে অফিসে থাকার দরকার কী? উনি নিরাপত্তার কথা বলে চিঠি লিখবেন, আবার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিলে বলবেন অবরোধ করা হয়েছে। আমরা যাব কোথায়? বিএনপি নেত্রী তার নেতা-কর্মী সবার সঙ্গে দেখা করছেন, কথা বলছেন, কর্মসূচি দিচ্ছেন। তাহলে তিনি কীভাবে অবরুদ্ধ?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, তখন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এভাবে চোখের সামনে আমাদের দেশকে ধ্বংস হতে দেখতে পারি না। বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আজ আমরা সব দিক থেকে যখন উন্নয়নের পথে, ঠিক তখন কীসের এই আন্দোলন। আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, অত্যাচার-জুলুম কেন? ইস্যুটা কী? গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি না থাকে তাহলে আসবে কে? হয় ২০০৮ সালের মতো ওই রকম ইমার্জেন্সি। অথবা মার্শাল ল’। আমি জানি না তারা এইগুলো আনতে চায় কিনা? কিন্তু এখনকার বিশ্বে এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে। দল করতে গিয়ে দল করতে পারে না, ব্যর্থ হয়। জনগণের কাছে গেলে দাঁড়াতে পারে না, জনগণের কাজ করতে পারে না। বিদেশি লোকদের সঙ্গেই দহরম-মহরম করে, মনে করে অন্যদের দিয়েই ক্ষমতায় আসবে। এই যে একটা শ্রেণি, যাদের সংগঠন করার কোনো ক্ষমতা নেই, জনসমর্থন আদায় করার শক্তি নেই; তারা জনগণের কল্যাণের কথাও চিন্তা করে না, কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার কথা চিন্তা করে, ক্ষমতায় যাওয়ার কথা চিন্তা করে। ওই ধরনের অসাংবিধানিক সরকার বা ইমার্জেন্সি সরকার এলে তাদের লাভ হয়, কারণ তারা একটু মন্ত্রী হতে পারে, পতাকা উড়াতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি এতদিন দেশে মিথ্যাচার করত সেটা একটা কথা। আজকে বিদেশিরাও পার পাচ্ছে না। এটা গোটা বাংলাদেশের মানুষের লজ্জা। তারা যদি মনে করে থাকে ভারত তাদের ক্ষমতায় বসাবে, কংগ্রেসম্যানরা এদের ক্ষমতায় বসাবে অথবা আমাদের সরকারকে উৎখাত করিয়ে দেবে- এভাবে চিন্তাভাবনা যদি থাকে সেটা খুব দুর্ভাগ্যের। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এটা দেখেই বিএনপি নেত্রীর এই আন্দোলন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু এই বিচার কেন হবে না? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যারা যুদ্ধাপরাধী- তাদের বিচার তো এখনো চলছে। পৃথিবীর যেখানে যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে সেখানে বিচার হয়েছে। আমাদের এখানেও বিচার হতে হবে। না হলে আমরা কলঙ্কমুক্ত হব না। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কী কী করেছি সেটা আর বললাম না। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাদের জন্য আরও কত কি করতে পারি সেটাই কথা। তবে সব মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আদর্শ ধরে রাখতে পারেননি- এটাও মাথায় রাখতে হবে। অনেকেই তো ওই বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে, রাজাকারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে গেছেন।
পুলিশ কনস্টেবলকে দেখতে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী : রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন পেট্রলবোমায় দগ্ধ পুলিশ কনস্টেবল শামীম মিয়াকে গতকাল দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের কাছে শামীম মিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং তার সুচিকিৎসার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে উপস্থিত আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী বোমাবাজ ও অগ্নিসংযোগকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পরে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে শাহানাজকে দেখতে যান। উল্লেখ্য, গত শনিবার রমনা পার্কের পাশের রাস্তায় মৎস্য ভবনের কাছে অবরোধকারীরা পুলিশের গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারলে পুলিশ কনস্টেবল শামীম মিয়া আগুনে দগ্ধ হন।

সর্বশেষ খবর