শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
পরীক্ষার মধ্যেই অবরোধের সঙ্গে হরতাল

উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা হতাশা ক্ষোভ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আর মাত্র একদিন বাকি। বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট অবরোধের পাশাপাশি কাল থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটও তাদের কর্মসূচি পালনে আরও কঠোর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা। পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন, পেট্রলবোমা নিক্ষেপের কারণে সন্তানকে ঘরের বাইরে ছাড়তেও নারাজ অভিভাবকরা। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা কিভাবে যাবে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
হরতালে পরীক্ষা পেছানো হবে কি না জানতে চাইলে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিএনপির কাছে আমি দুই হাত তুলে অনুরোধ জানাই পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেওয়া হোক। পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে আমরা ভাবছি না। পরীক্ষার্থীরা আমাদের সবার সন্তান। বিএনপিসহ ২০-দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষার আগের দিন বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের হরতাল-অবরোধের আওতা মুক্ত রাখার ঘোষণা আসতে পারে। বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে সেই আবেদন জানানো হয়েছে বিএনপি নেত্রীবৃন্দের কাছে। গত বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, আমার দুটি মাত্র সন্তান। দুজনই পরীক্ষা দেবে। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে আমার ছেলেমেয়েরা যাত্রাবাড়ীর সড়ক দিয়ে কিভাবে কেন্দ্রে যাবে। এর উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এ কথা খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন। আমরা বিএনপিকে অনুরোধ করে বলেছি কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। তারা করেননি। তারা পেট্রলবোমা মারে। তাদের জিজ্ঞাসা করুন পরীক্ষার্থীদের গায়ে পেট্রলবোমা মারবে কি না। তাদের কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করতে পারি না। অন্যদিকে অবরোধ-হরতালে পেট্রলবোমা, গাড়ি ভাঙচুরের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, হরতালের কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে ফলাফলে। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আর এ সময় সহিংস পরিস্থিতি বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের (বাওয়া) অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম জানান, ওই কেন্দ্রে নগরীর ফৌজদারহাট এলাকা থেকে পরীক্ষার্থীরা  আসবে। জীবন আগে না পরীক্ষা আগে। হরতাল-অবরোধে পরীক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পরীক্ষার্থী সুলতানা রাজিয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা অবরোধ-হরতাল বুঝি না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করতে চাই। আমরা কোনো দলের না। এদিকে পরীক্ষা চলাকালে দায়িত্বপালনের জন্য বিভাগীয় শহরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। কেন্দ্রের পাশাপাশি রাস্তায়ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। গতকাল একাধিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি না থাকলেও শহরে এই ঝুঁকি প্রবল। তাই সার্বিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে এক ধরনের শঙ্কা থাকছে। বিষয়টি তারা মন্ত্রণালয়ের নজরে এনেছেন। তবে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হবে ১০ মার্চ। এরপর ১১ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর খাতা দেখে ফল প্রস্তুত করতে সময় লাগবে তিন মাস। সে ক্ষেত্রে যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হলেই জুনের শেষ সপ্তাহে ফল প্রকাশ করা সম্ভব। পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হলে ফল প্রকাশ এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে পড়াশোনাও পিছিয়ে যাবে। ফলে নষ্ট হয়ে যাবে অনেকগুলো সময়।

সর্বশেষ খবর