শিরোনাম
শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

২৭ কেজি সোনাসহ আটক কোরীয় কূটনীতিক

ছাড়িয়ে নিল দূতাবাস

২৭ কেজি সোনাসহ আটক কোরীয় কূটনীতিক

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৭ কেজি সোনাসহ সন ইয়াং নামে এক কূটনীতিক আটক হওয়ার পর গতকাল দুপুরে উত্তর কোরীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর কোরীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট ইকোনমিক ফর কমার্শিয়াল সেক্রেটারি সন ইয়াংয়ের লাগেজ থেকে স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর আগে তিনি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (এসকিউ-৪৪৬) ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে কোনো কূটনীতিকের লাগেজ থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এএসপি তানজিনা আক্তার জানান, সিঙ্গাপুর থেকে আসা সন ইয়াংয়ের লাগেজ থেকে ২৭ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ সময় চার কূটনীতিক তাকে রিসিভ করতে আসেন। পরবর্তীতে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। এপিবিএন, ঢাকা কাস্টম হাউস এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে সন ইয়াং বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ করে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় কাস্টমস কর্মকর্তারা তার ট্রলি ব্যাগটি স্ক্যান করতে চান। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে লাগেজটি স্ক্যানে বাধা দেন। এতে সন্দেহ হলে কাস্টমস কর্মকর্তারা তার পরিচয় জানতে চান। তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘এটি কূটনৈতিক লাগেজ, তাই স্ক্যান করা যাবে না।’ একপর্যায়ে সন ইয়াং দ্রুত গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে আসেন। পরে এপিবিএন সদস্যরা তাকে আটক করে অফিসে নিয়ে যান। এ সময় তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা বাংলাদেশে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার হাইকমিশনার মুন সং হো, ফার্স্ট সেক্রেটারি কো চো মিন, থার্ড সেক্রেটারি রি চোল সান, ডেপুটি চিফ অব মিশন কেং কিং এপিবিএন অফিসে যান। কিন্তু তারা নিজেদের পরিচয় না দিয়ে সন ইয়াংকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তারা একটি কূটনৈতিক পেপারস দেখিয়ে সেটি স্ক্যান না করার জন্য বলেন। পরে এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান, ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম-কমিশনার কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, সহকারী কমিশনার রিয়াদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মধ্যরাত পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেন। একপর্যায়ে এপিবিএন কর্মকর্তারা ওই পাঁচ কূটনীতিককে লাগেজ রেখে চলে যেতে বলেন। এতেও তারা রাজি হননি। পরে বল প্রয়োগের কথা বললে সন ইয়াং লাগেজটি হাত থেকে ফ্লোরে রেখে দেন। লাগেজটি স্ক্যান করা হলে স্বর্ণের অস্তিত্ব মেলে। এটি খোলা হলে ১৯ কেজি ওজনের ১৭০ পিস স্বর্ণের বার এবং ৮ কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। এর পর ওই পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে কাস্টমস হলে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা নিজেদের উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিক বলে পরিচয় দেন। দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টা পর কূটনীতিকরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ায় উপস্থিত সবাই হতবাক হন। কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস করতে না পেরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খবর দেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছুটে এসে নিশ্চিত করেন, স্বর্ণ বহনকারী সন ইয়াংসহ পাঁচজনই উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিক। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, এপিবিএন কর্মকর্তা, ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা ও কাস্টমস গোয়েন্দা এবং তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর ভিয়েনা কনভেনশন আইন অনুযায়ী স্বর্ণগুলো জব্দ করে ওই পাঁচ কূটনীতিককে ছেড়ে দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান জানান, কূটনীতিকদের লাগেজ স্ক্যান করার নিয়ম নেই। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে তারা যদি অবৈধ পণ্য আনেন তাহলে সেটি দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের করণীয় ঠিক করবে। কিন্তু সন ইয়াং শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছেন। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর