বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
দেশকে ছোট করে আইসিসি সভাপতি থাকা সম্ভব নয়

পদ ছাড়লেন ক্ষুব্ধ কামাল

পদ ছাড়লেন ক্ষুব্ধ কামাল

বিমানবন্দরে নেমেই সংবাদ সম্মেলনে লোটাস কামাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই গতকাল আইসিসি সভাপতির পদ ছেড়ে দিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিমান থেকে নেমে তিনি সোজা ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে এসে বসেন। চোখ ছলছল, স্বভাবসুলভ হাসিও নেই মুখে। কান্না জড়িত কণ্ঠে জানালেন, আইসিসির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ট্রফি দিতে না দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের ‘হক’ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের মানুষকে ‘ছোট’ করে আইসিসির সভাপতি পদে থাকা সম্ভব নয়। দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মুস্তফা কামাল, যিনি সমধিক ‘লোটাস কামাল’ হিসেবে সুপরিচিত। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট গৌরবের খেলা। এখানে আইন আছে। সবাইকে সবার কর্তব্য পালন করতে হয়। কিন্তু যখন দেখলাম আইন অমান্য করা হচ্ছে, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তখন তা আমি মেনে নিতে পারি না। এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম, অন্যায়ের সঙ্গে অসত্যের সঙ্গে কোনো আপস নেই। এখন বিশ্ব জানুক আইসিসিতে কি ঘটনা ঘটেছে। ক্রিকেটের মতো গৌরবের খেলায় কুৎসিত মানুষগুলো যাতে চিরতরে বিতাড়িত হয় এবং সামনে পবিত্র মানুষদের হাতে ক্ষমতা যায় এ জন্যই আমার এই পদত্যাগ।’ সিদ্ধান্তের জন্য লোটাস কামালকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের সাবেক অধিনায়ক, পরিচালক ও সাধারণ মানুষ। কাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কামালের পদত্যাগের বিষয়টি। লোটাস কামালের পদত্যাগের পর বিশ্ব মিডিয়াতেও ঝড় ওঠে। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হিরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কামাল। তিনি আইসিসির সভাপতি হলেও যখন দেশের প্রতি অন্যায় হবে তখন তো আর তিনি নীরব থাকতে পারেন না।’ বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান মনে করেন, লোটাস কামাল ‘সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যক্তি লোটাস কামাল নয়, গোটা বাংলাদেশকে ছোট করতে চেয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। তার যোগ্য জবাবটা দিলেন লোটাস কামাল। এতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সুনাম আরও বাড়বে।’ বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। লোটাস কামালের আইসিসির সভাপতির পদত্যাগের মধ্যদিয়ে তা আরেকবার গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া হলো।’ আইসিসির সভাপতি পদে আরও তিন মাস মেয়াদ ছিল মুস্তফা কামালের। কিন্তু তার আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতে ৫-৬ জনের জরুরি সভায় ওই কুৎসিত লোকটা (শ্রীনিবাসন) আমাকে বলেছিল, মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে। আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। তারপর বলেছিল, ম্যাচ অফিসিয়ালদের নিয়ে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তখন আমি বলেছি, এটা ১৬ কোটি মানুষের মনের কথা, আমি কিভাবে প্রত্যাহার করব? এরপর তিনি আমাকে জানিয়ে দেন, আগামীকাল (২৯ মার্চ) আপনি ট্রফি দিতে পারবেন না! আমি তাকে বলেছি, ক্রিকেটকে এভাবে কবর দিবেন না! আমি কৈফিয়ত দিতে রাজি, দেশের মানুষকে ছোট করে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে রাজি নই।’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে মুস্তফা কামালের। কয়েক মুহূর্ত থেমে আবার বলতে শুরু করেন, ‘ওই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। এটা শুধু আমার ব্যাপার নয়, ওরা অন্যায়ভাবে কেড়ে নিচ্ছে ১৬ কোটি মানুষের ‘হক’।’ কয়েক মুহূর্ত পরে দৃঢ় আÍবিশ্বাসের সঙ্গে কামাল বলেন, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়েছিলাম, এই অন্যায়ের যেন বিচার হয়। হয়েছেও তো! ফাইনাল ম্যাচের পর যখন পুরস্কারদাতা নাম হিসেবে মাইকে ওই কুৎসিত লোকটির (শ্রীনিবাসন) নাম ঘোষণা করা হয়েছিল তখন মেলবোর্নের ৯০ হাজার দর্শক সমস্বরে বলে উঠলেন ‘মানি না, মানি না’। আমার মনে হলো তখন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে। সেদিন শচীন টেন্ডুলকার সঙ্গে না থাকলে উনি স্টেডিয়াম থেকে বের হতে পারতেন কিনা সন্দেহ!’ দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে একবারও নাটের গুরু শ্রীনিবাসনের নাম উচ্চারণ করেননি লোটাস কামাল। তিনি বলেন, ‘ওই কুৎসিত লোকটি নাম নিতেও আমার ঘৃণা হয়।’ আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলেও শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে রাজি নন কামাল। তিনি বলেন, ‘আমি মামলা করার পক্ষে না। অবশ্য যে অপরাধ করেছে সেটা মামলা করার মতোই। কিন্তু আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব। ওর (শ্রীনি) বিরুদ্ধে মামলা করে কি লাভ। সে বলবে আইসিসি আমাকে করতে বলেছে তাই করেছি। আমি জানি, আইসিসির দোষ নেই। গুটিকয়েক লোক আইসিসিকে কলুষিত করছে। আর এই কুৎসিত লোকগুলো দ্বারা কখনো ক্রিকেটের উন্নতি হতে পারে না।’ প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছিল আম্পায়াররা। সবগুলো সিদ্ধান্তই ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন আইসিসির সভাপতি মুস্তফা কামাল।

সর্বশেষ খবর