বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ব্লগার বাবু হত্যাকাণ্ড

হত্যা পরিকল্পনা ১৫ দিনের মহড়া চলে পাঁচ দিন

হত্যা পরিকল্পনা ১৫ দিনের মহড়া চলে পাঁচ দিন

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যার জন্য পাঁচ দিনের সশস্ত্র মহড়ায় অংশ নেয় নিষিদ্ধ-ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) স্লিপার সেলের সদস্যরা। কিলিং মিশনের দায়িত্বে ছিল এবিটির পাঁচ সদস্যের স্লিপার সেল। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় বাবুকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে এবিটির পাঁচ সদস্যের স্লিপার সেল চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। তবে মহড়ার এই সময়ের মধ্যে স্লিপার সেলের অন্যতম সদস্য সাইফুল ইসলাম পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। কিন্তু বাবু হত্যার মিশন থেমে থাকেনি। সেলের অপর সদস্যরা সম্পন্ন করে তাদের কিলিং মিশন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ব্যাপক জেরার মুখে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এবিটির দুই সদস্য জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম। তাদের আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ছাড়া মামলার তদন্তভার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান।
এদিকে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক মাসুম এবিটির এই স্লিপার সেলের সমন্বয়কারী বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। এবিটির একাধিক স্লিপার সেল রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তবে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায় হত্যার স্লিপার সেলের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন পলাতক প্রধান সন্দেহভাজন রেদোয়ানুল আজাদ রানা। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রানাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, এরা সবাই এবিটির আধ্যাত্মিক নেতা কারাবন্দী জসীম উদ্দীন রাহমানীর অনুসারী। রাহমানী পিকনিকের নাম করে ২০১২ সালে জিহাদের উদ্দেশ্যে দলবল নিয়ে মিয়ানমারের আরাকানে যেতে চেয়েছিলেন। খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরিফুলও এর আগেও নরসিংদীর রায়পুরা থানায় জেএমবির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কিছু উগ্রবাদী বই পাওয়া গিয়েছিল। ওই মামলায় ২৬ জনের মধ্যে সে চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল। পরে আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয় আরিফুল। যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল জানান, আরিফুল জামিনে বের হওয়ার পর জসিম উদ্দিন রাহমানীর মসজিদ ও মাদ্রাসায় জুমার নামাজের পর বয়ান শুনে তার ভক্ত হন। আর জিকরুল্লাহ তার পূর্বপরিচিত। মানুষকে হত্যার জন্য কীভাবে কোপাতে হয় সে বিষয়ে স্লিপার সেলের সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা যেন ভয় না পায় এবং চাপাতি নিয়ে কোনো রকম সংশয় না থাকে সে জন্য কয়েক দিন ব্যাগে চাপাতি নিয়ে ঘুরেছে। একই সঙ্গে কোপ দেওয়ার সময় নিজেরা যেন আহত না হয় সে প্রশিক্ষণও তারা পেয়েছে।
সূত্র জানায়, স্লিপার সেলের একজন সদস্যের সঙ্গে অন্য সদস্যের কোনো ধরনের পরিচয় থাকে না। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার আগ পর্যন্ত স্লিপার সেলের সদস্যরা একে অপরের কাছে অচেনা থাকে। কিলিং মিশনের সময় স্লিপার সেলের সদস্যরা কমপক্ষে তিন থেকে সর্বোচ্চ সাতজন নিয়ে একটি গ্রুপ করে। এর মধ্যে একজন দলনেতা থাকে। তাদের একজনের সঙ্গে অপরের পরিচয় করিয়ে দেয় মূল পরিকল্পনাকারী। দলনেতাই প্রত্যেক সদস্যকে মিশনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে দেয় যে কাকে কীভাবে খুন করতে হবে। বাবু হত্যার পরিকল্পনাকারী মাসুম নিজেই স্লিপার সেলের সদস্যদের অস্ত্র সরবরাহ করে।
সূত্রমতে, আদর্শিকভাবে এক হলেও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হত্যা, হুমকি ও নাশকতার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। তারা কখন কাকে টার্গেট করছে সব ক্ষেত্রে গোয়েন্দাদের তা বোঝার উপায় থাকছে না। বিশেষ করে এবিটির সদস্যরা টার্গেট করে হত্যা করছে ব্লগারদের। তারা সাতজনের স্লিপার সেল থেকে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে নিজের পরিচয় গোপন করছে একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে তেজগাঁও বেগুনবাড়ী এলাকায় খুন হন ওয়াশিকুর রহমান বাবু। হত্যাকাণ্ড শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর