বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
বিআরটিএ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন

নেপথ্যে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার

নেপথ্যে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার

কলেজ শিক্ষিকা কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাসের খুনি হলেন তার স্বামীর ব্যবসার অংশীদার জহিরুল ইসলাম পলাশ। এই পলাশই ফুল, কেক, জুস ও ফল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সেই বাসায়। বাসার সবাইকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান। পলাশকে পুলিশ খুঁজছে। কৃষ্ণা বিশ্বাসের স্বামী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস। তিনি ও তার দুই মেয়েও হামলার শিকার হন। পুলিশ জানিয়েছে, সীতাংশু বিশ্বাস চাকরির পাশাপাশি পলাশের সঙ্গে শেয়ার ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে পলাশের ১৫ কোটি টাকার শেয়ার নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই জের ধরে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। পলাশকে ধরতে পারলে খুনের মূল কারণ জানা যাবে। এদিকে হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেছেন কৃষ্ণা বিশ্বাসের দেবর সুধাংশু শেখর বিশ্বাস (মামলা নম্বর-৫৩)। মামলার একমাত্র আসামি জহিরুল ইসলাম পলাশ এখন পলাতক। পুলিশ বলছে, নিহতের স্বামী বিআরটিএ কর্মকর্তা সীতাংশু শেখর বিশ্বাস গুরুতর অসুস্থ থাকায় তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ পলাশ নামে ওই ব্যক্তিকে ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পলাশকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তারা দ্রুত আসামিকে গ্রেফতার করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, ব্যবসায়িক বিরোধেই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। পলাশকে ধরতে পারলেই হত্যার কারণ জানা যাবে। আসামি পলাশের গুলশান ব্যবসায়িক কার্যালয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারে উল্লিখিত ঠিকানা অনুযায়ী ওয়ারী ও পল্লবীর বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। তাকে ধরতে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। ওসি আশা করেন, দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেফতার সম্ভব হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাহবুব রহমান জানান, বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত চলছে। ঘটনার সময় জাকির হোসেন নামে একজনের নাম পাওয়া গেলেও মামলায় নিহতের দেবর জহিরুল ইসলাম পলাশ নামে একজনের নাম উল্লেখ করেছেন। সবগুলো বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিআরটিএ কর্মকর্তা সীতাংশু বিশ্বাসের বিপুল পরিমাণ টাকা পলাশের সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ইনভেস্ট করা হয়েছে। ওই টাকা নিয়ে কোনো ঝামেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে আসামিকে ধরতে পারলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর জন্মদিনের কেক ও উপহার দেওয়ার জন্য বিআরটিএর উপপরিচালক সীতাংশু বিশ্বাসের বাসায় আসে তার বিজনেস পার্টনার পলাশ। জুসের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায় পলাশ। পরে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। সীতাংশু বিশ্বাসের স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস এগিয়ে এলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। তার চিৎকারে তাদের দুই কন্যা শ্রুতি বিশ্বাস ও অত্রি বিশ্বাস এগিয়ে এলে তাদেরও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে পলাশ। পরে গান পাউডার ছিটিয়ে কৃষ্ণা বিশ্বাসের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ওই দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামলীর কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কৃষ্ণা বিশ্বাসকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বর্তমানে বিআরটিএ কর্মকর্তা সীতাংশু বিশ্বাস ও তার দুই মেয়ে মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সর্বশেষ খবর