রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিটি নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট কমাবে

তালেয়া রেহমান

সিটি নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট কমাবে

বিএনপির সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী কর্মকর্তা তালেয়া রেহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এতে রাজনৈতিক সংকট কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে তবে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ২৮টি বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য তালেয়া রেহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হোক। এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হয় না, তবে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে যেহেতু সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর সমান সুযোগ থাকতে হবে। আর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। প্রত্যেক প্রার্থী যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পান। একই সঙ্গে প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন নির্বাচন কমিশনকে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য অবশ্য তাদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। আবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরও অনেক প্রার্থী হুঁশিয়ারি পাচ্ছেন না।’ তালেয়া রেহমান বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন পাশের দেশ ভারতের মতো এত শক্তিশালী নয়। কারণ ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাজ শুরুর অনেক পরে বাংলাদেশের ইলেকশন কমিশন কাজ শুরু করে। তার পরও আমরা আশা করছি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে সমানভাবে সুযোগ পাবেন। পত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম, মাইকে প্রার্থীদের প্রচারণা চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু প্রার্থী তা লঙ্ঘন করছেন। এ ধরনের দু-তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী নিয়ম না মানলে নির্বাচন কমিশন যে হুঁশিয়ারি দেবে, একইভাবে অন্য দল সমর্থিতদের ক্ষেত্রেও বিধি লঙ্ঘন করলে তাদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা চাইতে হবে। এজন্য আমি কমিশনের কাছে আহ্বান করছি, বিধি লঙ্ঘন করলে সবার বিরুদ্ধেই সমানভাবে ব্যবস্থা নিতে।’ তিনি বলেন, এটা ঠিক যে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এ নির্বাচনের কোনো মিল নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে অংশ নেন। এখানে সমর্থনের কোনো ব্যাপার নেই। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এর মিল নেই। নির্বাচনে এখন প্রার্থীদের দলীয় সমর্থন দেওয়া এক ধরনের প্রথায় পরিণত হয়েছে। কারণ প্রার্থীদের এ ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে যে, সরকার সমর্থন দিলে তারা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন। তালেয়া রেহমান বলেন, ‘আমরা যতই মনে করি না কেন যে, এ নির্বাচনে দলীয় প্রভাব পড়বে না কিন্তু কিছুটা দলীয় প্রভাব ঠিকই পড়ে। এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে যে, এ সময়ের মধ্যে নিজেদের ভোটারের কাছে তুলে ধরতে প্রার্থীরা হিমশিম খাচ্ছেন। আবার অনেক প্রার্থী যেমন মির্জা আব্বাস নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সুযোগও পাচ্ছেন না। তবে ভালো খবর এই যে, কিছু জায়গায় প্রার্থীরা সবাই মিলে হাত ধরে ভোটারদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু প্রার্থীদের মনে রাখতে হবে সরকার এ নির্বাচনে মুখ্য নয়, এখানে ভোটাররাই মুখ্য বিষয়। অন্যদিকে নাগরিকরাও নাগরিক সেবার জন্য মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। আর মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিভিন্ন কাজের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। জনগণের সরকারের কাছে নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়, কিন্তু তারা মেয়র ও কাউন্সিলরদের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে জনগণের এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া উপায় নেই। তবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা সরকার সমর্থিত না বিরোধী দলের, ভোটাররা তা বিবেচনায় আনবেন না। যিনি যোগ্য তাকেই ভোট দেবেন। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বেশির ভাগই নতুন মুখ।’ তালেয়া রেহমান মনে করেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানোর প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই চাচ্ছেন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে। অন্যদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার কারণে পুলিশের ওপর থেকেও মানুষের আস্থা উঠে যাওয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী নামানোর পক্ষে।

সর্বশেষ খবর