বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

অস্ত্র গ্রেনেড নিয়ে আসে ওরা

দুপুরের খাবার শেষ করে যে যার মতো নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এর একটু পরই গ্রাহক বেশে ১০-১৫ জন একসঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় গ্রাহকদের সহায়তা করছিলেন কেউ কেউ। কয়েক মুহূর্তেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। ওরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে নিরাপত্তারক্ষীসহ সবাইকে। এরপর চালায় লুটপাট। কথাগুলো বলেছেন ব্যাংকের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ যেন সিনেমার মতো স্টাইল। কোনো মাফিয়া চক্রের হামলার দৃশ্যের মতো মনে হলো। মুহূর্তের মধ্যে দেখতে দেখতে কী হয়ে গেল বলে কাঁদতে থাকেন এই কর্মকর্তা। ঢাকার আশুলিয়া কাঠগড়া বাজার এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের একটি শাখায় এভাবেই শুরু হয়েছিল ডাকাতি। তখন বিকাল ৩টা ত্রিশের ঘর ছুঁই ছুঁই করছিল।
স্থানীয়রা দৌড়ে গিয়ে মসজিদের মাইকে জানিয়ে দেয় ব্যাংক ডাকাতির খবর। এ সময় ডাকাতরা সতর্ক হয়ে ওঠে। নগদ টাকা লুটপাট করে দ্রুত বেরিয়ে যায়। এরপর তারা পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু চারপাশে পরিস্থিতি বেসামাল দেখতে পেয়ে গুলি করতে থাকে। এতে আতঙ্কে কিছুটা পিছু হটেন স্থানীয়রা। আরও আতঙ্ক ছড়াতে ডাকাতরা কয়েকটি ককটেল আর গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়।
ডাকাতরা নির্বাচার গুলি চালায়। এতে এলাকার চার বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে। তারা ডাকাতদের আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রের মুখে পিছু হটেন। নির্বিচারে গুলি করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারেনি। এর প্রমাণ মিলেছে কাঠগড়া বাজার পেরিয়ে আমতলা এলাকার জিরাবো-বিশমাইল সড়কে পৌঁছলেই। আধুনিক অস্ত্র উপেক্ষা করেই এক ডাকাতকে আটক করে স্থানীয়রা। এরপর খানিক দূরে গিয়ে দুর্গাপুর এলাকা থেকে ডাকাত দলের আরও দুই সদস্যকে আটক করে এলাকাবাসী। ক্ষোভ আর রাগে এ সময় ডাকাতদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক ডাকাত।
ঘটনার পর স্থানীয়রা ব্যাংক শাখায় গিয়ে দেখতে পান মর্মান্তিক পরিস্থিতি। পুরো কার্যালয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত আর রক্ত। মেঝেতে পড়ে যাওয়া রক্ত জমাট বেঁধেছে। ঘণ্টা দুয়েক আগেও ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। আর সেখানে নেমে এসেছে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। ডাকাতদের নির্বিচারে ছুরিকাঘাত আর ধারালো অস্ত্রের হামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমবেশি সবাই রক্তাক্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজারসহ নিহত হয়েছেন আটজন। পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের গণপিটুনি দেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর