বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরাপত্তায় ভরসা দোনলা বন্দুক

সোনালী ব্যাংকের রংপুর বাজার ব্রাঞ্চ। একটি পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকের শাখা। আজিজার রহমান ও সাইদুর রহমান নামের দুই নিরাপত্তারক্ষী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে নিশ্চিত করেন ব্যাংকের সমুদয় নিরাপত্তা। তারা একটি বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী কোম্পানি থেকে সরবরাহকৃত। তবে আশ্চর্য হলেও সত্যি, এই দুই নিরাপত্তারক্ষী কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই নিশ্চিত করছেন ব্যাংকের সব মূল্যবান সম্পদের নিরাপত্তা। রাজধানীর বাংলামোটরের বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ভবন। বহু মূল্যবান কাগজপত্র এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয় এই শাখায়। শুধু তাই নয়, ভবনের সামনে রয়েছে একটি এটিএম বুথ। তবে পুরো ভবনসহ এটিএম বুথের দায়িত্বে রয়েছেন দুজন নিরাপত্তারক্ষী। তাদের সম্বল কেবল একটি করে দু-নলা বন্দুক। দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা অফিসের নিরাপত্তার চিত্র প্রায় একই। অনেক ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীই নেই। কিছু ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাদের আত্মরক্ষা এবং ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রও (দু-নলা বন্দুক) নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের সারা দেশে ১১৯টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। তবে এই ব্যাংকে মাত্র ৩৫ জন আর্মড গার্ড (সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী) রয়েছে। তারা ব্যবহার করেন পুরনো আমলের দু-নলা বন্দুক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানি থেকে তারা একেকটি ব্রাঞ্চের ব্যাংকিং কর্মঘণ্টার (আট ঘণ্টা) জন্য একজন করে আর্মড গার্ড নিয়ে থাকেন। বাকি দুই শিফটে একজন করে সাধারণ গার্ড দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয় জমা রাখে ব্যাংকগুলোতে। নিয়মিতভাবে তারা ব্যাংকে লেনদেনের জন্য যাতায়াত করেন। তবে সেখানে যদি নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন ঝুঁকিপূর্ণ থাকে তবে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। আবার ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য সরকারের উচিত নতুন করে চিন্তা করা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও উচিত এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা। তিনি আরও বলেন, গতকাল আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকের ঘটনাটি দুর্ধর্ষ, সেই সঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে একাধিক ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী আশুলিয়ার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে দিনদুপুরে ব্যাংক ব্যবস্থাপক এবং নিরাপত্তারক্ষী ও একজন গ্রাহকসহ ৬ জনকে খুন করে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করেছিল ডাকাত দল। চলতি মাসের ১৫ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর জিগাতলায় সাত মসজিদ রোডে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখায় ডাকাতির চেষ্টা চালায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা ব্যাংকের জানালার গ্রিল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তদের হামলায় নিরাপত্তা কর্মী আবদুল ওহাব (৪৫) গুরুতর আহত হন। তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে এলে দুর্বৃত্ততের মিশন ব্যর্থ হয়। গত ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ঈদের ছুটিতে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের ইসলামী ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে ৭২ লাখ টাকা লুট হয়। ব্যাংক ম্যানেজার মাহমুদ হাসান জানান, ডাকাতরা নাইট্রিক এসিড ব্যবহার করে ভল্ট ভেঙে ফেলে। ফিঙ্গার প্রিন্ট যাতে না পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখায় দুর্বৃত্তরা সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাটের ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা থেকে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি ধানমন্ডির হোটেল নিদ মহলে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখার ৭৫টি লকার ও ৬২টি ভল্ট ভেঙে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহ্ফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশুলিয়ার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে একটি দুর্ঘটনা। তবে সার্বিকভাবে ব্যাংকসমূহের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখা হবে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উচিত ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা।

সর্বশেষ খবর