বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
হত্যার জন্যই আক্রমণ : খালেদা

ফের হামলার চেষ্টা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে গত রাতেও হামলার চেষ্টা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে নামার চতুর্থ দিনে পলওয়েল মার্কেটের সামনে থেকে বক্তৃতা শেষ করে নয়াপল্টনে ফেরার পথে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে ফকিরাপুল কাঁচাবাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন, হামলার চেষ্টাকারীরা ছিল ৪০-৫০ জন। তারা ছাত্রলীগের কর্মী। তারা ইটপাটকেল ও লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে ধাওয়া করে। পরে সফরসঙ্গী ও আশপাশের লোকজন জড় হয়ে ধাওয়া দিলে ওরা গলির ভিতরে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এর আগে খালেদা জিয়া রাজধানীর শাহজাহানপুর, শান্তিনগর টুইন টাওয়ার ও পলওয়েল সুপার মার্কেটে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা চালান। সে সময় তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, অবৈধ ও অত্যাচারী সরকার আমাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। তারা আমার প্রাণনাশের জন্য গাড়িতে গুলি চালিয়েছে। এ সরকারের আমলে জানমালের নিরাপত্তা নেই। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সিটি নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে জনজোয়ার দেখে এ সরকার উম্মাদ হয়ে গেছে। আশা করি আপনারা ভোট দিয়ে আমার সন্তান হারানোর বেদনা উপশম করবেন। টানা চতুর্থ দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়ে খালেদা জিয়া গতকাল এসব কথা বলেন। এদিন তিনি প্রথমেই তার গুলশানের বাসভবন থেকে বের হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উত্তর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে বাণিজ্যিক মার্কেট এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন। গতকাল বিকাল সোয়া ৫টার পর খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রচারণা চালান। আগের দিনগুলোর মতো গতকালও প্রচারণায় বের হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কোন এলাকায় প্রচারণা চালাতে যাবেন কিংবা কখন যাবেন, এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। তবে এদিন বিকাল সোয়া ৪টা থেকেই খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে তার জন্য পুলিশ প্রটোকলসহ তার গাড়িটিকে প্রস্তুত রাখা হয়। গতকাল বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে নতুন বাজারের দিকে এগিয়ে যান। এরপর বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ও হাজীপাড়া হয়ে শাহজাহানপুরের দিকে এগিয়ে যান। শাহজাহানপুরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিএনপি-প্রধানের গাড়িবহর পৌঁছে। সেখানে তিনি প্রায় ১০ মিনিট গণসংযোগ করেন। এ সময় খালেদা জিয়া বেশ কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান ঘুরে দোকানিদের নিজ হাতে লিফলেট বিলি করেন। লিফলেট দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথা হয়। দোকানিদের খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা দেখতেই পারছেন নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের কীভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে’। তিনি এ সময় ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে সব বাধা প্রতিহত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রচারণায় থাকা বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও আশপাশের হাজারো মানুষ বিএনপির পক্ষে স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকেন। এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর প্রচারণার জন্য শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে যায়। এ সময় তার সঙ্গে ছিল অর্ধশত মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলে চড়ে বিএনপি সমর্থিতরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তীব্র যানজটের কারণে শান্তিনগরের উভয় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। টুইন টাওয়ারে গিয়ে খালেদা জিয়া নিচ তলার বিভিন্ন দোকানদারের কাছে মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চেয়ে লিফলেট বিলি করেন। ভোট চাওয়া শেষে টুইন টাওয়ারের বাইরে এসে খালেদা জিয়া হ্যান্ডমাইকে উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘বিএনপি এর আগেও সব সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সে কারণে এবারও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। আমাদের ওপর হামলা করছে। তারা আমার প্রাণনাশের জন্য গাড়িতে গুলিও চালিয়েছে। গাড়ির গ্লাসে এখনো সেই গুলির দাগ আছে। এ ছাড়া আমাদের দলের সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। এখনো তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।’ খালেদা বলেন, ‘এ সরকারের আমলে জানমালের নিরাপত্তা নেই। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। মা-বোনদের উদ্দেশ করে বলব, নববর্ষের দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছেন কীভাবে হামলা ও নারী নির্যাতন চালানো হয়েছে। কাজেই এখনই সতর্ক হোন। নইলে ছেলেমেয়ে নিয়ে কেউ নিরাপদে থাকতে পারবেন না।’ তিনি সন্ত্রাস, আবর্জনা, মশা, হত্যা, চাঁদাবাজিমুক্ত ঢাকা পাওয়ার জন্য মির্জা আব্বাসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আব্বাস এ এলাকার সন্তান, তাকে আপনারা ভালো করে চেনেন। আর অন্যদেরও চেনেন। নোংরা আবর্জনামুক্ত মহানগর চাইলে তাকে ভোট দিন।’ তিনি আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতিতে সাতজনকে গুলি করে হত্যা প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা হত্যা করেছে তারা কারা? আমি বলব এরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসী। তাই আজ এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ খালেদা জিয়া বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে জনজোয়ার দেখে এ সরকার উম্মাদ হয়ে গেছে। এরপর খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে পলওয়েল সুপার মার্কেটে গিয়ে প্রচারণা চালান। এ সময় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও প্রচারণায় যোগ দেন। খালেদা জিয়া এখানে বলেন, ‘আপনারা জানেন কিছু দিন আগে আমার এক সন্তানকে হারিয়েছি। সন্তান হারানোর বেদনা নিয়েও আমি আপনাদের কাছে এসেছি। মির্জা আব্বাস আমার সন্তানের মতো। আমি তার জন্য ভোট চাইতে এসেছি। আশা করি আপনারা ভোট দিয়ে আমার সন্তান হারানোর বেদনা উপশম করবেন।’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে গতকাল প্রচারণা চালানোর সময় ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সেক্রেটারি শিরিন সুলতানা, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো কূটনীতিকদের দেখালো বিএনপি : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার খবরে উদ্বিগ্ন ঢাকার ১৭ দেশ ও সংস্থার বিদেশি কূটনীতিক গতকাল হামলার বিষয়ে জানতে গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কূটনীতিকরা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গাড়িবহরে হামলা নিয়ে কথা বলেন। পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কূটনীতিকদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলোর ছবি তোলেন। বিকাল ৫টার পর কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি। সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা এ হামলার ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের কাছে সমবেদনা জানিয়েছেন। গতকাল বিকাল ৪টার কিছু আগে প্রথমে পাকিস্তান ও ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনাররা এসে গাড়িটি দেখে খালেদার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর একে একে আসেন জাপানের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার ডেপুটি হাইকমিশনার, কাতার, তুরস্ক, ফ্রান্স, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, কুয়েত, নেদারল্যান্ডসের উপ-রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে সব শেষে প্রবেশ করেন একজন ভারতীয় কূটনীতিক। এ সময় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা আহমেদ খান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর