মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

আনিসুলের মানবিক ঢাকা তাবিথের আদর্শ নগর

আনিসুলের মানবিক ঢাকা তাবিথের আদর্শ নগর

মেয়র হিসেবে কাকে বেছে নেবেন ভোটাররা- এ প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। চায়ের দোকান, রাস্তায়, বাসাবাড়িতে নির্বাচনী আলোচনায় এ ক্ষেত্রে উত্তর সিটির দুই প্রার্থীর নামই ঘুরেফিরে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হকের ‘মানবিক ঢাকা’-কে ভোটাররা বেছে নিচ্ছেন, নাকি তারা আকৃষ্ট হবেন বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়ালের ‘আদর্শ ঢাকা’র স্লোগানে- সবার মাঝে এখন এটাই আলোচনার বিষয়বস্তু।
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে সর্বাধিক ভোটার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। প্রায় চব্বিশ লাখ ভোটারের এই সিটিতে প্রধান দুই দল সমর্থিত দুই হেভিওয়েট প্রার্থীই রাজনীতির মাঠে নতুন মুখ। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের প্রাধান্য থাকা গুলশান, বনানী, উত্তরা এলাকার এই দুই প্রার্থী ব্যবসা ঘরানার। একজন নিজেই ব্যবসায়ী নেতা। আরেকজন ব্যবসায়ী নেতার ছেলে। ইতিমধ্যেই সিটি নির্বাচন পেয়েছে রাজনৈতিক আমেজ। জাতীয় ইস্যুও প্রভাব রাখছে উত্তরের নির্বাচনে। সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, উন্নয়নের জন্য তাকে ভোট দিতে। অন্যদিকে আন্দোলনে থাকা বিএনপি প্রার্থী বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার প্রতিশোধ নিতে। এসব আলোচনাও দাগ কাটছে ভোটারদের মনে।
জানা যায়, উত্তর সিটিতে ১৬ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটারদের কাছে মূল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়াল। আনিসুল হকের প্রতীক টেবিলঘড়ি। মূলত মানবিক ঢাকা গড়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামা আনিসুল হক সরকারি দলের আনুকূল্যে চষে বেড়িয়েছেন উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সরকারের সুবিধা নিয়ে উন্নয়নের। উত্তর সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের ‘নাগরিক সমস্যা ও প্রত্যাশা’ নিয়ে জরিপ করেছেন। বলেছেন, সমস্যা চিহ্নিত, এবার অগ্রযাত্রা। গবেষণায় প্রায় আড়াইশ তথ্য সংগ্রাহকের মাধ্যমে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নাগরিক সমস্যার নানা প্রশ্ন সম্বলিত জরিপপত্র নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গিয়েছেন। তাদের কাছে উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরে একটি মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিদিন ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিষ্কার করার চিত্র, তরুণদের সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে সবুজ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো সবার নজর কেড়েছে। তিনি নিজের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে উন্নয়নের জন্য মেয়র হতে টেবিলঘড়ি প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। ক্লিন ইমেজের ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে নিয়ে পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ডে, ওয়ার্ডে, অলিগলির চায়ের দোকানে সরব আলোচনায় ব্যস্ত ভোটাররা। তার ক্যারিশমা, সফল টিভি ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে কাজ করার দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততা প্রাধান্য পাচ্ছে ভোটারদের আলোচনার মধ্যে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুকেই প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় আলোচনায় আসেন এবং বিএনপির সমর্থন পান মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তার প্রতীক বাস। একেবারেই নতুন এই প্রার্থী পিতার পরিচয়েই এগিয়েছেন। সঙ্গে পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চালানো প্রচারণা। খালেদা জিয়ার মাঠে নামা ও তার ওপর হামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় রাজনীতির প্রভাব জড়িয়ে গেছে তাবিথের সঙ্গে। রাজনৈতিক হয়রানি, ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে বাস প্রতীকে ভোট চাইতে মানুষের কাছে গিয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ৫ জানুয়ারির প্রতিশোধ নিতে। বাস প্রতীকে ভোট দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে শক্ত করতে চাইছেন তারা। ধারণা পাওয়া যায়, তরুণ হিসেবে এবং উত্তর সিটির তুলনামূলক কম বয়সী প্রার্থী হওয়ার কারণে নতুন ভোটারদের কাছে তার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। লোকাল বাসে চড়ে সাধারণ মানুষের কাছে তার ব্যতিক্রমী প্রচারণাও দৃষ্টি কেড়েছে তরুণদের। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন ঢাকা গড়ার। বলেছেন, এই শহরে নারীদের নিরাপত্তা থাকবে, নারীদের সম্মান থাকবে। এবার গড়ব নতুন ঢাকা। অবশ্য গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নানান স্তরের ভোটারের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, ভোটাররা নানা হিসাব-নিকাশ করছেন। ভোটাররা বিবেচনায় নিচ্ছেন প্রার্থীদের যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, কাজের দক্ষতা, সাংগঠনিক দক্ষতা। সেই সঙ্গে প্রার্থীরা সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত কিনা- এসব বিষয় নিয়ে বিচার করছেন। সব মিলিয়ে ভোটাররা আনিসুল হকের টেবিলঘড়ি, নাকি তাবিথ আউয়ালের বাস প্রতীকে ভোট দেবেন- সে উত্তর মিলবে আজ।

সর্বশেষ খবর