মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপির পক্ষে সহিংস হবে না জামায়াত

আজকের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে সহিংস তৎপরতায় জড়াবে না জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত শুধু নিজেদের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এমনকি যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নেই সেখানে পরিবেশ স্বাভাবিক না থাকলে ভোটও দিতে যাবে না। সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ঘোষণার সময় জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা না করা, সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের বিপদে বিএনপি পাশে না থাকায় এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি জামায়াতের বিপরীতে থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে জামায়াতের পল্টন থানার দায়িত্বশীল নেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন শুধু সেসব কেন্দ্রে যেতে দলের ভোটারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। অন্যথায় শুধু মগ বা বাসের জন্য জীবন বাজি রেখে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেই। তিনি বলেন, জামায়াতের একের পর এক বিপদের সময় জোটপ্রধান হয়েও বিএনপি নীরব ছিল। এখন আমরা তাদের জন্য জীবন বাজি রেখে মাঠে নামতে পারি না। তিনি বলেন, আমাদের দলের কোনো মেয়র প্রার্থী নেই। আমরা কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত। অনেক ওয়ার্ডে দেখা যাবে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আমাদের ভোটের লড়াই হচ্ছে। জানা যায়, বিএনপি এ নির্বাচনে আসবে কিনা এ নিয়ে যখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল তখন ঢাকা দক্ষিণে গোলাম মাওলা রনিকে জামায়াত সাপোর্ট দেওয়ার কথা ভেবেছিল। রনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সাবেক সংসদ সদস্য। পরবর্তীতে বিএনপি নির্বাচনে আসায় তাদের সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে ভোট দেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ব্যাপারে নমনীয় জামায়াত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, তাবিথ ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ইস্কানদার আলীর মেয়ের জামাই হওয়ায় তার প্রতি আলাদা একটা সহানুভূতি রয়েছে দলীয় নেতা-কর্মী ভোটারদের। ইতিমধ্যেই দলের সব পর্যায়ের ভোটার ও নেতা-কর্মীদের কাছে এ খবর পৌঁছে গেছে। তাছাড়া তাবিথ নতুন প্রার্থী হওয়ায় তার সঙ্গে জামায়াতের কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। জানা যায়, চলমান রাজনীতিতে জামায়াত কোণঠাসা হলেও সিটি নির্বাচনে বিএনপির জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর দলটির রিজার্ভ ভোট। কিন্তু রাজনৈতিক মেরুকরণে কিছু ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আজকের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন এ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটের মাঠে। রাজধানীর দুই অংশে জামায়াতের দেড় থেকে দুই লক্ষাধিক ভোটার রয়েছে বলে জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে। এ ছাড়াও দলের শুভাকাক্সক্ষী ও কর্মী-সমর্থক রয়েছে আরও প্রায় দুই-তিন লক্ষাধিক। যারা ভোটের মাঠে প্রভাব সৃষ্টিতে বড় ধরনের একটা ভূমিকা রাখতে পারেন। সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটিতে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ছাড় দিচ্ছে না জামায়াত। দুই সিটির সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৭ জন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে জামায়াত। জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ, বিএনপিপন্থি নাগরিকদের সংগঠন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২০ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই তালিকা সম্পর্কে জামায়াত অবহিত নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। জামায়াত সূত্র জানায়, কাউন্সিলর পদে বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত। দলীয় কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত নন কিন্তু এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন লোকজন বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জামায়াত সূত্র দাবি করেছে। জামায়াত সমর্থিত ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ঢাকা উত্তরে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৪ জন এবং দক্ষিণে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৩ জন।

সর্বশেষ খবর