ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তাদের ধারণ করা কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ খোয়া গেছে। ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এগুলো ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাহলে কী ছিল এই ভিডিও ফুটেজে? এ নিয়ে ইসিতে এখন আলোচনার ঝড়। ফুটেজ 'ছিনতাই'য়ের ঘটনায় এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের নামও এসেছে।
তিন সিটি নির্বাচনের অবস্থা জানতে ইসি নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও ভোট কেন্দ্রের ভিডিও ধারণের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতা, পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসারের বাড়াবাড়িতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সফলভাবে তা সম্পন্ন করতে পারেননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ঢুকতে তাদের পুলিশি জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ব্যালটে সিল মারার ভিডিও ধারণ করায় ফুটেজ ছিনতাই হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানা গেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা কয়েকটি ওয়েব ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্যামেরা বসানো ৫৩টি কেন্দ্রের পাঁচটি ল্যাপটপ কম্পিউটার খোয়া গেছে। ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে অনেক ল্যাপটপের। সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটির পল্লবী এলাকার একটি কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করা হয়েছে। দক্ষিণের হাজারীবাগ এলাকায় দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার ল্যাপটপ খোয়া যায়। আরও চারটি ল্যাপটপ বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ভিডিও দৃশ্য ধারণের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় একটি কেন্দ্রে জাল ভোটের দৃশ্য ধারণ করায় এক সংসদ সদস্য নিজে ওই ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেছেন। তা ছাড়া ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্টও দেওয়া হয়নি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ২৩টি করে ৪৬টি ও চট্টগ্রামে সাতটি- মোট ৫৩টি কেন্দ্রে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এগুলো পরিচালনায় ছিলেন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা ও কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও দৃশ্যধারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিয়েছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোটের দৃশ্য ধারণ করায় ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আবার কয়েকটি কেন্দ্রে ফুটেজ মুছে ক্যামেরা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে নির্বাচনের সার্বক্ষণিক দৃশ্য ধারণ সম্ভব হয়নি।এদিকে কারচুপি, সহিংসতা ও অনিয়মের তদন্ত চেয়ে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ স্থগিত ও আবার ভোট গ্রহণের অসংখ্য অবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। অনেক প্রার্থীরই অভিযোগ, এসব আবেদন আমলে নেয়নি কমিশন। তিন সিটিতে ২৮ এপ্রিল নির্বাচন হয়।