কারাগারে অসুস্থ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সুচিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল ওই বোর্ড দ্রুত কিছু পরীক্ষার সুপারিশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। এদিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মির্জা ফখরুলকে দুপুরের দিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সকাল পৌনে ১০টায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নন এসির একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়। প্রচণ্ড গরমে মির্জা ফখরুলকে এ সময় বিমর্ষ ও দুর্বল দেখাচ্ছিল। তিনি উঠে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। পরে তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে পরিচালকের (হাসপাতাল) কক্ষে নেওয়া হয়।
এরপর অধ্যাপক রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক সজল ?কৃষ্ণ ব্যানার্জী, অধ্যাপক হাসান মাসউদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খান, অধ্যাপক আতিকুর রহমান ও অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। এ মেডিকেল বোর্ড পৌনে ১১টা থেকে এক ঘণ্টা ভিআইপি ডিলাক্স কেবিনে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এ সময় মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও পাশে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার স্বামীর ওজন অন্তত ১৫ কেজি কমে গেছে। স্বাস্থ্য খুবই খারাপ।
এরপর মেডিকেল বোর্ড একটি সুপারিশ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ ভুঁইয়ার কাছে পাঠান। দুপুর ১২টার দিকে আবদুল মজিদ ভুঁইয়া নিজের কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে দেখেছেন। বর্তমানে তার শারীরিক কোনো গুরুতর সমস্যা নেই। বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এগুলো করা হবে। বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল (স্টেবল)।' এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, 'মির্জা ফখরুলের বর্তমান শারীরিক অবস্থা এমন নয় যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তিনি কোনো ভর্তিযোগ্য সমস্যার মধ্যে নেই।'জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ড মির্জা ফখরুলের রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইকো কালারডপলারসহ সাত-আটটি পরীক্ষার সুপারিশ করে। দুপুর ১টার দিকে কেবিন থেকে তাকে হুইল চেয়ারে করে বহির্বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মির্জা ফখরুলকে দেখে কেবিনের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের অধ্যাপক রফিকুল আলম বলেন, 'তার হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে। হৃদযন্ত্রে রিং লাগানো আছে। তার মাথা চক্কর দেয়। মেরুদণ্ডে ব্যথা (ব্যাক পেইন) রয়েছে। আমরা কিছু পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছি।' বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে ভর্তি করার সুপারিশ করেছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমরা রোগীর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছি। রিপোর্টগুলো দেখার পর পরবর্তী সুপারিশ করব। ভর্তির বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।' এর আগে সকালে কারা চিকিৎসক মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, 'মির্জা ফখরুলের ইন্টারনাল করোটিড আর্টারি ব্লক রয়েছে। এ ছাড়া তিনি আইবিএস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। তাকে ভাসকুলার সার্জন, নিউরোলজিস্ট, গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট ও কার্ডিওলজিস্ট দেখানো প্রয়োজন।' এদিকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও যাতায়াতে আরও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মির্জা ফখরুল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আপাতত না-ও আসতে পারেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয় মির্জা ফখরুলকে। ৮ জানুয়ারি তাকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।-নিজস্ব প্রতিবেদক