বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফাইনালটা জিততে চান মুশফিক

ফাইনালটা জিততে চান মুশফিক

বাজি বৈধ হলে নিশ্চিতভাবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যেত! বক্স অফিস হিট করত। বাম্পার, সুপার বাম্পার-সবই হতো। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে ঢাকার আকাশে-বাতাসে যে রং লেগেছে, যে উন্মাদনা বইছে এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের যে আগ্রহ, তাতে বাজির দর আকাশচুম্বী হওয়াই স্বাভাবিক। না হলেই বরং কুঞ্চিত হবে ললাট। বৈধ নয় বলে কেউ আবার মিরপুর টেস্ট নিয়ে বাজি ধরতেও পারছেন না। তাই বলে আগাম ভবিতব্য বলা থেকে বিরতও যে থাকছেন, তাও কিন্তু নয়। চোখ বন্ধ করে গনকের মতো সবাই বলে দিচ্ছেন টেস্টের ফলাফল। প্রথমে ওয়ানডে সিরিজ, এরপর টি-২০ ম্যাচ এবং সর্বশেষ খুলনা টেস্টের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স; সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। মরচে পড়া পাকিস্তান এখন শনির দশায়। বাজির বৈধতা না থাকলেও ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্লেষক, সবার ফেবারিট মুশফিকুর রহিমের বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টটি অন্য আট-দশটির মতোই। রেকর্ড বুকে লেখাও থাকবে তাই। কিন্তু বিশ্বকাপ পরবর্তী টাইগারদের যে সাফল্য এবং পাকিস্তানকে একের পর এক যেভাবে নাকাল করছে, তাতে মিরপুর টেস্টটির আবহ এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বলে ভাবছেন সবাই। ভাবনায় কোনো অতিশয়োক্তিও নেই। ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচের মতো অসাধারণ ক্রিকেট খেলে যদি পাকিস্তানকে হারিয়েই দেয় মুশফিকবাহিনী, তাহলে ৯০ নম্বর টেস্টে এটা হবে টাইগারদের ৮ম জয়। কিন্তু তারচেয়েও বড় প্রাপ্তি হবে পাকিস্তানকে হারান। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা অর্জন। তাই ইতিহাস গড়ার টেস্ট বললে কম বলা হবে কী? মিরপুর টেস্টের বল মাঠে গড়ানোর আগে মিরপুরের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে খুলনার কীর্তিগাথা। চাপের মুখে, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে কি অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েসরা। তা নিয়ে এখনো চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে। মিরপুরের আলোচনা মূল কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে। কি করেছেন তামিম-ইমরুল? খুলনা এমনিতেই রেকর্ডের ভেন্যু। টাইগাররা মাঠে নামা মানেই রেকর্ডের ছড়াছড়ি। ১০ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে আবুল হাসান রাজুর সেঞ্চুরি। ইয়ান বোথাম, ইমরান খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই টেস্টে সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০ উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ডও গড়েন সাকিব আল হাসান। এবার কি বাদ যাবে? তা কি হয়? আবুল হাসান, সাকিবের দেখানো পথে তামিম-ইমরুল লিখলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বর্ণালি ইতিহাস। যে ইতিহাসের কথন চলবে আজীবন। ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ যখন হারের শঙ্কায়, ইনিংস হারানোর ভাবনায় নুয়ে পড়েছে, তখনই ব্যাটকে খাপ খোলা তলোয়াড়ে পরিণত করে এমনভাবে শাসন করেছেন পাকিস্তানি বোলার ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ হাফিজ, ইয়াসির শাহদের, দেখে মনে হচ্ছিল ক্রিকেটের জন্যই যে জন্ম এই দুই বাঁ হাতি ওপেনারের। দুই বাঁ হাতি ওপেনার ৩১২ রানের জুটি গড়ে শুধু ম্যাচ বাঁচাননি, গড়েছেন নতুন বিশ্বরেকর্ড। ভেঙেছেন ৫৫ বছরের পুরনো কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড। ইমরুল ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রানের ইনিংস খেলে মিস করে ডাবল সেঞ্চুরি। কিন্তু তামিম হাঁটেননি ইমরুলের পথে। -আসিফ ইকবাল

 

মুশফিকুর রহিমের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তামিম। ২০১৩ সালে গলে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। প্রায় দুই বছর পর খুলনায় ২০৬ রান করেন বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার। ডাবল সেঞ্চুরি করে শুধু নিজের রেকর্ডকে উপরে নিয়ে যাননি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আত্দবিশ্বাসের পারদটাকেও টেনে তুলেছেন উপরের দিকে। উত্ত্যুঙ্গে থাকা আত্দবিশ্বাস নিয়েই আজ মুশফিকবাহিনী প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে টার্গেটে নামছেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে টাইগার অধিনায়ক আত্দবিশ্বাসী কণ্ঠেই বললেন, টার্গেট জয়, 'আমরা পুরোটা সিরিজই ভালো খেলছি। যদি ঢাকায় সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি, তাহলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়া সম্ভব। এজন্য অবশ্য আমাদের পুরো পাঁচদিন ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।' জয়ের টার্গেটে মাঠে নামলেও ইনজুরি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের দুই ব্যাটিং কাণ্ডারী অধিনায়ক মুশফিক ভুগছেন আঙুলের ব্যথায় এবং তামিম ভুগছেন ডান পায়ের টোয়ের ইনজুরিতে। তারপরও দুজনই খেলবেন। তবে পরিবর্তন আসতে পারে একাদশে। খুলনা টেস্টের স্ট্রাইক বোলার রুবেল হোসেন খেলছেন না। তার জায়গায় খেলার সম্ভাবনা রয়েছে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনের। এতে করে সাকিব ও তাইজুল ইসলামের সঙ্গে আরও এক অর্থোডক্স স্পিনার খেলবেন একাদশে। জুবায়ের খেললে একাদশ সাজানো হতে পারে এক পেসার নিয়ে। যদি দুই পেসার খেলেন, তাহলে কপাল পুড়তে পারে শুভাগত হোমের। এই প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে উঁকি দিচ্ছে সিরিজ জয়ের হাতছানি। সেই হাতছানিকে উপেক্ষা করার কোনো কারণও দেখছেন না টাইগার অধিনায়ক। তাই উজ্জীবিত, উদ্দীপ্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে মিরপুরের ২২ গজি উইকেটে ঝাঁপিয়ে পড়বে টাইগাররা।

সম্ভাব্য একাদশ : তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, শুভাগত হোম/জুবায়ের রহমান লিখন, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ, জুবায়ের রহমান লিখন/শাহাদাত হোসেন রাজিব।

 

 

সর্বশেষ খবর