শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

হাসিনাকে মোদির ফোন

সীমান্ত বিল পাস লোকসভায়

হাসিনাকে মোদির ফোন

রাজ্যসভার পর গতকাল ভারতীয় সংসদের নিুকক্ষ লোকসভায়ও সর্বসম্মতভাবে পাস হলো বহুল প্রতীক্ষিত ভারত- বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংশোধনী  বিল। ‘বিল পাস হয়েছে’- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সংবাদ টেলিফোনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ বিষয়ে টুইটও করেছেন। নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে তার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানালাম।
গতকাল দুপুরে ১১৯তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিলের ওপর আলোচনার পর সন্ধ্যায় হয় ভোটাভুটি।
লোকসভায় উপস্থিত ৩৩১ জন সদস্যের সবাই বিলের পক্ষে ভোট দেন। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ঘোষণা করেন, ‘সর্বসম্মতভাবে বিলটি পাস হলো।’
সুষমা স্বরাজ সংসদে উপস্থিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সদস্যের উদ্দেশে বলেন, ‘বুধবার রাজ্যসভায় যে ঐকমত্য দেখা গিয়েছিল আজও তেমন ছবি যদি দেখা যায় তাহলে বাংলাদেশকে একটা সুসম্পর্কের বার্তা দেওয়া যাবে।’
সুষমা স্বরাজ বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার ৩ বছর পর ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দুই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে স্থলসীমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যেটা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামেই পরিচিত। কিন্তু জমি চিহ্নিতকরণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি। পরবর্তীকালে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। আজ আমি সেই বিলটি আপনাদের সামনে পেশ করলাম। ইউপিএ আমলে ২০১৩ সালের বিলটি পুনরায় পেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের সরকার ২০১৩ সালের ডিসেম্বর যখন এই বিল সংসদে এনেছিল তখন বিজেপি, আসাম গণপরিষদ (আগপ) ও তৃণমূল কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে। বিজেপি ও আগপ মনে করেছিল এই বিলে আসামের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভেবেছিলেন এ চুক্তির ফলে রাজ্যের ওপর অতিরিক্ত মানুষের বোঝা বাড়বে, যেটা রাজ্যের পক্ষে বহন করা সহজসাধ্য হবে না। এ জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজের কথাও জানিয়েছিলেন মমতা। এরপর সেই বিলটি সংসদের স্থায়ী সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত বছর মে মাসে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে।
সুষমা স্বরাজ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল বাংলাদেশ। সেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে আমার কথা হয়, এমনকি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও যখন আমার কথা হয়েছিল তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে যে সীমান্ত প্রটোকল চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেটি যেন বাস্তবে রূপ নেয়। আমি দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন এগিয়ে যেতে। আসাম নিয়ে যে জটিলতা হয়েছিল তাও লোকসভাকে জানালেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আসামকে বাদ দিয়েই বিলটি আনার জন্য সংশোধনী প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস জানায় যে, আসামকে বাদ রাখলে এ বিলে তারা সমর্থন দেবে না। পরে কংগ্রেসের দাবি মেনেই আসামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সীমান্ত নির্ধারণ হবে, তেমনি ছিটমহলবাসীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটবে। পাশাপাশি ট্রানজিট, বাণিজ্যসহ দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরও প্রভূত উন্নতি হবে। তার আশা, ১৯৭১ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক যে উচ্চতায় ছিল, এই বিল পাসের মধ্য দিয়েও দুদেশের বর্তমান সম্পর্ক সেই উচ্চতায় পৌঁছবে।
গতকালের অধিবেশন এতটাই আবেগঘন হয়ে উঠেছিল যে, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং কেন্দ্রের সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া (বিজেপি) তার বক্তব্য পুরোটাই বাংলায় দেন। তিনি বলেন, ছিটমহলবাসীদের দুঃখ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমার আশা, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুদেশে বসবাসরত ছিটমহলবাসীর সমস্যার সমাধান হবে। বক্তৃতার এক পর্যায়ে আলুওয়ালিয়া গেয়ে ওঠেন ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’। এই বিল নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি গান পরিবেশন করেন তৃণমূলের সংসদ সদস্য সুগত বসুও। গতকাল পাস হওয়া বিলটি এখন সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরুর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো তথা পুনর্বাসনের কাজও শুরু হবে। এ চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানে জনসংখ্যার কোনো বিনিময় হচ্ছে না। অর্থাৎ ছিটমহলের বাসিন্দাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যে, তারা কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চান। ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা যদি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য থাকবে। একইভাবে বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলবাসীরা যদি নিজেদের দেশ ভারতেই থাকতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রেও ভারত সরকারও নিজেদের এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেবে। যার অর্থ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার নাগরিকত্বহীন বাসিন্দার জীবন ধারণের সমস্যা মিটবে।
মোদিকে ধন্যবাদ দিলেন খালেদা : ভারতের সংসদে বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ তথ্য জানান।

সর্বশেষ খবর