শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় নেই বাংলাদেশ

নতুন জিএসপি স্কিম ওবামার টেবিলে

যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিতে নতুন করে যে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স) স্কিম করছে তাতে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়নি। দেশটিতে চাহিদা রয়েছে এমন প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে নতুন করে জিএসপি স্কিম অনুমোদন করেছে সিনেট। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সেটি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার টেবিলে পাঠানো হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সতর্ক করে বলা হয়েছে, তাদের দেওয়া সব শর্ত পূরণ না করলে ওই সুবিধার বিষয়টি মার্কিন প্রশাসন নতুন করে বিবেচনা করবে না। এবার সেই আশঙ্কাটিই সত্যি হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ যে শর্তটি নিয়ে  বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল সেটি হচ্ছে ইপিজেডে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা দেওয়া। সরকার সেটি মেনে নেয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২২ এবং ২৩ এপ্রিল নতুন জিএসপি স্কিম সংক্রান্ত বিলটি অনুমোদন করে দেশটির সিনেট (ফিন্যান্স অ্যান্ড হাউজ ওয়েস অ্যান্ড মিনস কমিটি)। এতে আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের দেশসহ বিশ্বের ১২২টি উন্নয়নশীল দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত দেশগুলোকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ এই শুল্ক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা সই করার পর এটি কার্যকর হবে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই জিএসপি স্কিমে নাম না থাকার বিষয়টি বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন এই জিএসপি স্কিমের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন করে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্কিমটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সে কারণে বাংলাদেশ নেই এখনই বলা যাচ্ছে না। নতুন স্কিমে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে কোনো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান। রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২৮ জুন মার্কিন বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। এরপরই কলকারখানার পরিবেশ উন্নত ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে ১৬টি শর্ত দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়। একই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শর্তগুলোর ব্যাপারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামা। এরপরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ওই শর্তগুলো বাস্তবায়নে একযোগে কাজ শুরু করে। ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও সময় চায় সরকার। পরে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সময় শেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন বাণিজ্য দফতরে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্বলিত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি থাকলেও সংশোধিত শ্রম আইনে তাদের সব শর্ত বাস্তবায়ন হয়নি এবং ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধাও চালু করা হয়নি। তবে গত বছর ২১ অক্টোবর ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে শ্রম পরিবেশ সংক্রান্ত ‘সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট’ শীর্ষক বৈঠকে জিএসপি সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বৈঠকের পরের সপ্তাহে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ হয়। বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। বৈঠকে সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা এবং ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে আবারও চাপ দেওয়া হয়।  ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় ফিরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চায়, আমরা বলেছি, ওই আইনে মন্ত্রী পরিষদে যে সংশোধন এসেছে তার বেশি একটা দাড়ি, কমা, সেমিকোলনও আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে জিএসপি সংক্রান্ত ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নে কঠোর মনোভাব পোষণ করে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন থেকে বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ইপিজেড আইনে ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা যুক্ত করার যে শর্ত রয়েছে (অ্যাকশন প্ল্যানে) সেটি পূরণ করতে হবে। অন্যথায় ভেবে নেওয়া হবে তাদের দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে অংশীদারিত্ব সংলাপ হয়, সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু না করায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর