শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ নির্বাচন শেষ, বাংলাদেশি তিন প্রার্থীর জয়ের প্রত্যাশা

ব্রিটিশ নির্বাচন শেষ, বাংলাদেশি তিন প্রার্থীর জয়ের প্রত্যাশা

বিশ্বের প্রাচীন গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাজ্যের নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নিতে গতকাল সাধারণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় পাঁচ কোটি ভোটার তাদের মত প্রদান করেছেন। আজ ভোটের ফল প্রকাশ হলে জানা যাবে কে হচ্ছেন নতুন ব্রিটিশ নেতা। তবে সর্বশেষ জরিপগুলোতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দল কনজারভেটিভ পার্টি এবং বিরোধী দলে থাকা এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে এই নির্বাচনে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীকে নিয়ে। যদিও মোট ১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী থাকলেও শেষ মুহূর্তে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যজুড়ে ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যুক্তরাজ্য সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা) পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের পাশাপাশি দেশটির ২৭৯টি স্থানীয় কাউন্সিলের ৯ হাজার সদস্য পদ এবং বেডফোর্ড, কোপল্যান্ড, লিচেস্টার, ম্যানসফিল্ড ও মিডলবরোর মেয়র নির্বাচনেও ভোট গ্রহণ হয় একই সঙ্গে। পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৫৩৩টি আসনেই প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন ইংল্যান্ডের ভোটাররা। এ ছাড়া ৫৯টি আসনের জন্য স্কটল্যান্ড, ৪০টিতে ওয়েলস এবং ১৮টিতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। স্ত্রী সামান্থাকে নিয়ে ভোট দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ডও তার স্ত্রীকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। জানা যায়, হাউস অব কমন্সের আসন সংখ্যা ৬৫০। তার মানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার অন্তত ৩২৬টি আসন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম কঠিন ভোটের লড়াইয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে, যাতে যে কোনো দলের পক্ষেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর কোনো দল তা না পেলে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আবারও একটি ঝুলন্ত সরকারকে দেখা যাবে, যার ফলাফল হতে পারে বহুমুখী। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেমনটি ঘটলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে যুক্তরাজ্য ভোটাভুটির দিকে এগোতে পারে; স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবি চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে নতুন করে। বিবিসির সর্বশেষ জনমত জরিপে কনজারভেটিভদের পক্ষে ৩৪ শতাংশ এবং লেবারের পক্ষে ৩৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি (ইউকেআইপি) ১৩ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রেটস ৮ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ৫ শতাংশ ও অন্যান্য দল ৬ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছে বলে এই জরিপে আভাস এসেছে। আসনের হিসাব দেখিয়ে প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বলেছে, কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ বিরোধীরা জোটবদ্ধ হলে তারাই সরকার গঠন করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তুলনামূলক ছোট তিন দল লিবারেল ডেমোক্রেট, ইউকেআইপি ও স্কটল্যান্ডভিত্তিক দল এসএনপির কতজন এমপি নির্বাচিত হন এবং দলের নেতারা কোন পক্ষে যান, তার উপরই নির্ভর করবে পরবর্তী সরকার।
কোন দল ক্ষমতায় যাচ্ছে তা নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে যতটা আগ্রহ, তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের কারা নির্বাচিত হচ্ছেন তা নিয়ে। এবারই প্রথম মূলধারার দলগুলো থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১২ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একজনের প্রার্থিতা বাতিল হলেও ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১১ জন। এদের মধ্যে সাতজন প্রার্থী হয়েছেন লেবার পার্টি থেকে। এ ছাড়া লিব ডেম থেকে তিনজন এবং কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এ ভোটে লড়ছেন। লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা হক, মেরিনা আহমেদ, আনওয়ার বাবুল মিয়া, আলী আখলাকুল ও এমরান হোসাইন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মিনা রহমান এবং লিবডেম থেকে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, আশুক আহমদ ও মোহাম্মদ সুলতান।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে রুশনারা আলী নিজে তার নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় সময় সাশ্রয়ে আগেই পোস্টাল ভোটে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিক তার স্বামী ক্রিস পার্সিকে সঙ্গে নিয়ে নিজ এলাকার ভোটকেন্দ্রে সকালেই তার ভোট দেন। আর রূপাও সকালে নিজ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের পর আলোচিত এই তিন প্রার্থীই নিজে ও তাদের দল লেবার পার্টির বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভোট দেওয়া শেষেই তারা বেরিয়ে পড়েন অন্যান্য কেন্দ্র পরিদর্শনে।

সর্বশেষ খবর