শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে জবাই করে মা-মেয়েকে হত্যা

চট্টগ্রামে জবাই করে মা-মেয়েকে হত্যা

চট্টগ্রামে মা-মেয়েকে জবাই করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবা ও গৃহ-শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এমন হৃদয়-বিদারক ঘটনায় কান্না থামাতে পারেনি প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজনরা। নিষ্পাপ শিশুটিসহ তার মাকে কি কারণে, কারা হত্যা করেছে- এমন রহস্যঘেরা ঘটনার চুলচেরা তদন্ত করছে পুলিশ প্রশাসন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলো নাসিমা বেগম (৩৬) এবং মেয়ে রিয়া আক্তার (৮)। রিয়া পূর্ব-মাদারবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। নাসিমার স্বামী শাহ আলমের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধুর গ্রামে। স্বামী শাহ আলম পেশায় কসাইয়ের কাজ করেন। তার খাসির মাংস ও মুরগি বিক্রির দুটি দোকান আছে। শাহ আলম স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ নালাপাড়ার ৫৩৫ হোটেল আল ইসলামিয়ার ষষ্ঠতলা ভবনের চতুর্থ তলায় বসবাস করতেন মাংস ব্যবসায়ী শাহ আলমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাসিমা বেগম ও মেয়ে রিয়া আক্তার ফালগুনী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে অন্য দুই ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪) ও রিয়াদ হোসেন (১২) মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার আধাঘণ্টা আগে দুজনই স্কুলে চলে যায়। বাসার কাছেই গলির মুখে একটি মুরগির দোকান এবং কিছু দূরে খাসির মাংস বিক্রি করতেন শাহ আলম। চার মাস আগে শাহ আলম পরিবার নিয়ে ওই ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। এতে পরিবার ছাড়াও শ্যালক ও এক দোকান কর্মচারী থাকতেন। ঘটনার আগে সকাল ৯টার দিকে মাংসের দোকানে যান শাহ আলম। তার আগে শ্যালক আলাল ও দোকান কর্মচারী বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর মধ্যে সোয়া ৯টার দিকে স্বামী শাহ আলম তার স্ত্রী নাসিমা বেগমকে ফোন করে ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এরপর দোকান থেকে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ছেলে রিয়াদ ও হৃদয়কে স্কুলে পাঠান শাহ আলম। বাসার গৃহপরিচারিকা জামেনা বেগম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো কাজ করতে যাই। এ সময় বাসার দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকতেই ড্রইং রুমে গলা কাটা অবস্থায় নাছিমা বেগম এবং বাথরুমের দরজার ওপর গলাকাটা অবস্থায় মেয়ে রিয়া আক্তারকে দেখি। এতে চিৎকার করে উঠলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন। পরে দৌড়ে গিয়ে গলির মুরগির দোকানে থাকা নাসিমার ভাই আলালকে ডেকে আনি। এ সময় মালিক শাহ আলমকেও ডেকে এনে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
ঘটনার পরপরই নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনা তদন্তে পৌনে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে সিআইডির একটি টিম। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তিন থেকে পাঁচজন লোক এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সম্ভবত সবার মুখে মাস্ক লাগানো ছিল। ঘটনাস্থল থেকে দুটি মাস্ক উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি পুলিশ, সিআইডি, ডিবির একাধিক টিম তদন্ত করছে। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে নিহতের স্বামী শাহ আলমের পক্ষ থেকে যেহেতু স্টিলের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডাকাতির বিষয়টিও তদন্তে রয়েছে। আরও বেশকিছু হত্যাকাণ্ডের ক্লু নিয়ে কাজ চলছে। তবে পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাসিমার স্বামী শাহ আলম, ভবনের দারোয়ান সুজন, সিদ্দিক, গৃহ-শিক্ষক রকিসহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে আরও অনেককেই।
নিহতের স্বামী শাহ আলম বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যা করেছে। স্টিলের আলমারি থেকে আট থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি দোকান বা ঘরের নয়।
সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাসার ওয়ারড্রোবের ওপর থেকে রক্তমাখা একটি ছোরা উদ্ধার করেছি। স্টিলের আলমারি খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। আলমারির ভিতরের ড্রয়ারও খোলা পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর