শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট

দিনটা খারাপ ছিল টাইগারদের

ইয়াসির আরাফাতের বলটি মুশফিকুর রহিমের প্যাডে লাগার সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে আবেদন করে উঠেন পাকিস্তানের সব ক্রিকেটার। আবেদন এতটাই জোরালো,  যে আঙুল উঠাতে সময় নিলেন না নাইজেল লং। কিন্তু রিভিউ নিলেন আÍবিশ্বাসী মুশফিক। বেঁচেও গেলেন। বল ব্যাটে না লাগায় সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু দিনের শেষ ওভারে নিজেকে আর বাঁচাতে পারলেন না। ইয়াসিরের রং ওয়ানে বালকসুলভ মানসিকতায় খেলতে যেয়ে পরিষ্কার বোল্ড। দেশসেরা ক্রিকেটার এমনিতেই টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে সমালোচনার তীর্যকবানে জর্জরিত, তার উপর কাল দিনের শেষ ওভারে কাট খেলতে যেয়ে যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে তার গদি নড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেটা পরের কথা হলেও ব্যাটসম্যানদের লাগাতার ব্যর্থতায় ফলোঅনের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১০৭ রান তুলে কোনোরকমে দিন পার করেছে ঠিকই, তবে ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশকে করতে হবে আরও ২৫১ রান। কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডং নয়, ফলোঅন এড়াতে মুশফিকবাহিনীকে পাড়ি দিতে হবে হিমালয়! তার উপর ইনজুরির জন্য ব্যাটিং করতে পারবেন না শাহাদাত হোসেন রাজিব। তাই আজ হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ইমরুল যে স্বপ্ন দেখার কথা বললেন, সেটা কি আদৌ সম্ভব? মিরপুরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল সারা দিনই। কিন্তু বৃষ্টি হয়নি। যদিও এক পেসার নিয়ে খেলতে খেলতে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে মুশফিকবাহিনী তাকিয়ে ছিল বৃষ্টির দিকে। কিন্তু নামেনি। বৃষ্টি না হওয়ার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক আজহার আলি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আজহার খেলেন ২২৬ রানের নান্দনিক ইনিংস। শুধু আজহার নন, টাইগারদের ক্ষয়িঞ্চু বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে সেঞ্চুরি করেন ইউনুস খান ও আসাদ শফিকও। তিন তিনটি সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৫৫৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। চার বছর আগে চট্টগ্রামেও একইভাবে তিন সেঞ্চুরিতে ৫৯৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান টেস্ট জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে। কাল সেই দুঃস্বপ্ন শুরুতে দেখা দেয়নি। তবে দিনের শেষ সেসনে মুশফিক, মাহামুদুল্লাহ, ইমরুলরা যেভাবে ব্যাটিং করেন, তাতে মনেই হয়নি মাত্র এক সপ্তাহ আগে কি এক অসাধারণ ব্যাটিং করেছিল বাংলাদেশ। খুলনার আÍবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নেমে তাসের ঘরের মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। আর তাতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান তুলে এখন ফলোঅনের শঙ্কায় ভুগছে টাইগাররা। অবশ্য উইকেট আরও একটি বেশি যেতে পারত। যদি না ১৪ রানে অপরাজিত থাকা সাকিবের ক্যাচটি স্লিপে দাঁড়িয়ে থেকে ধরতে পারতেন ইউনুস।
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স বরাবরই তলানির দিকে। সিরিজ শুরুর আগেও যেখানে সবাই স্বপ্ন দেখছিলেন আরও একটি সিরিজ হারের। সেখানে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলার আÍবিশ্বাস নিয়ে ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তানকে। এরপর হারায় টি-২০ ম্যাচেও। শর্টার ভার্সানের অসাধারণ পারফরম্যান্স নিয়ে লড়াইয়ে নামে টেস্ট সিরিজ খেলতে। খেলেও স্বপ্নের এক ম্যাচ। ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে দুই বাঁ হাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল ৩১২ রানে রেকর্ড জুটি গড়ে শুধু ম্যাচই বাঁচায়নি, পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করেছে এবং স্বপ্ন দেখিয়েছে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের। অতিরিক্ত আÍবিশ্বাস কখনো কখনো যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, মুশফিকরা তার প্রমাণ পেলেন মিরপুরে। প্রচণ্ড রৌদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত টাইগার ব্যাটসম্যানরা তালগোল হারিয়ে ফেলে পাকিস্তানের বোলিংয়ের বিপক্ষে। এতটাই নাজেহাল হয়ে পড়ে যে, ফলোঅন এড়ানোর জন্য লড়তে হচ্ছে।
ম্যাচের যে চিত্র, পরের ৯ সেসনে সেটাকে কোথায় টেনে নিয়ে যান সাকিবরা, এখন সেটাই দেখার বিষয়। অবশ্য ‘গ্লোরিয়াস আনসার্টেন গেম ক্রিকেট’ মেনেই হয়তো নতুন কোনো কিছুর অপেক্ষায় থাকতে হবে। সেটা প্রকৃতি হতে পারে! কিংবা আরও একটি বিশ্ব রেকর্ডই পারবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে।

সর্বশেষ খবর