রবিবার, ২৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
সময় কাটছে পত্রিকা ফোন খোশগল্পে

সালাহউদ্দিনকে সিঙ্গাপুর নিতে শিলং আদালতে আবেদন

সালাহউদ্দিনকে সিঙ্গাপুর নিতে শিলং আদালতে আবেদন

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে শিলংয়ের আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। বিচারক পুলিশকে সালাহউদ্দিন সম্পর্কে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী ২৯ মে’র মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
আইনজীবী এস পি মোহন্ত বলেন, শুক্রবার শিলং জেলা জজকোর্টের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি তার মক্কেল সালাহউদ্দিনের জামিন ও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। আবেদনে বলা হয়, সালাহউদ্দিন প্রতিবেশী বাংলাদেশের সিনিয়র রাজনীতিবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। তিনি স্বেচ্ছায় ভারতে অনুপ্রবেশ করেননি। তাকে অপহরণ করে শিলংয়ে এনে ফেলা হয়েছে। তিনি আগেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। মোহন্ত জানান, আদালতে সালাহউদ্দিনের পাসপোর্টের ফটোকপি ও এর আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা গ্রহণের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। অপহরণের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে গেলে তাদের মামলা নেওয়া হয়নি। তাই অপহরণের প্রমাণ জমা দিতে না পারার বিষয়টিও আদালতকে অবগত করা হয়েছে। বিচারক ২৯ মে’র মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এদিকে আদালতের পুলিশ রিপোর্ট চাওয়া প্রসঙ্গে শিলং পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট বিবেক সিয়েম জানান, ‘আজ (গতকাল) শনিবার আদালত বন্ধ। তাই আদালতের নির্দেশের কপি এসে পৌঁছায়নি। আগামীকাল সোমবার আদালত খুললে হয়তো কপি পাব। এরপর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ছাড়পত্র পেলে সালাহউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে পাঠাব।’ এসপি বিবেক সিয়েম আরও জানান, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন আলামত থেকে ধারণা করা হচ্ছে সালাহউদ্দিন অপহৃত হয়ে ভারতের শিলংয়ে আসেননি। তিনি স্বেচ্ছায় অনুপ্রবেশ করেছেন। শিলংয়ের নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্স (নেগ্রিমস) হাসপাতালে অনেকটা খোশমেজাজে রয়েছেন সালাহউদ্দিন। হাসপাতালে থাকা তার স্ত্রী, ভাতিজাসহ অন্যদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন। স্বজন ও নার্সদেরও তিনি শোনাচ্ছেন কৌতুক। হাসপাতাল সূত্র ও সালাহউদ্দিনের স্বজনদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সালাউদ্দিনের ভাতিজা সাফওয়ানুল করিম জানান, শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে তার চাচার পাশে ছিলেন। এর পর থেকে তার চাচি হাসিনা আহমেদ হাসপাতালে আছেন। সাফওয়ানুল করিম জানান, চাচার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো। হাসপাতাল থেকে তিনি দেশে ও বিদেশে থাকা তার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও সালাহউদ্দিনের খোঁজখবর নিচ্ছেন। হাসপাতালে সালাহউদ্দিন খোশমেজাজে রয়েছেন জানিয়ে করিম বলেন, ‘একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে সালাহউদ্দিন তাকে নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য পড়েছেন। নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য ও তার বিপরীতে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্তব্য পড়ে তিনি হেসেছেন। সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তিনি একটি কৌতুক বানিয়েও আমাদের শুনিয়েছেন।’
শিলং আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে যেহেতু সালাহউদ্দিন সুস্থ হয়ে ওঠার পক্ষে তাই এটা প্রতীয়মান যে তার সুচিকিৎসা হচ্ছে। আদালত মানবিক দিক বিবেচনা করলেও আইনের ধরাবাঁধার কারণে তাকে হয়তো ভারতের বাইরে কোথাও চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব হবে না। তবে আদালত ভারতের আরও উন্নত কোনো হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করতে পারেন। সালাহউদ্দিনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির পথে জানিয়ে নেগ্রিমসের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট ভাস্কর বর্গাইন জানান, সালাহউদ্দিনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে। গতকালও তার ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। মূত্রনালির সংক্রমণও কমার পথে। তিনি নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করছেন। ঘুমও হচ্ছে সঠিক পরিমাণে। এভাবে আরও কয়েক দিন চললে সালাহউদ্দিনের ওজন ঘাটতিও কমে যাবে এবং তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সুস্থ হওয়ার পরই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর