আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় কমিটি। প্রতি ছয় মাস পর জাতীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আড়াই বছর ধরে তা আহ্বানই করা হয়নি। সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর। দীর্ঘদিন বৈঠক না হওয়ায় দলের ভিতরে-বাইরে এখন প্রশ্ন উঠেছে, ‘জাতীয় কমিটির কাজ কী?’ দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন জানিয়েছেন, বর্তমানে সব সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। যে কারণে ওই ফোরামের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ফোরামের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন অনেকে। দীর্ঘদিন আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না হওয়ায় বিগত দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন দলের নেতারা। জাতীয় কমিটির সদস্যরা কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘দীর্ঘদিন বৈঠক ডাকা হয় না। আমরা কমিটিতে আছি কি না তাও জানি না।’
দলের গঠনতন্ত্রের ১৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির মোট সদস্যসংখ্যা হবে ১৬৬ জন। এর মধ্যে প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে মোট ৭৩ জন, দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত ২১ জন, অন্যান্য ৬ জন। ১৭(খ) অনুযায়ী, জাতীয় কমিটি দলের কাউন্সিল ও কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। অনুচ্ছেদ ১৭(ঝ) অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র থাকছে উপেক্ষিত। কবে নাগাদ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তাও জানেন না জাতীয় কমিটির সদস্যরা। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আইনে প্রতিবছরই রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঙ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের হিসাব-নিকাশ ও বাজেটের অনুমোদন দেবেন জাতীয় কমিটির সদস্যরা। কিন্তু ২০১২ সালের পর আর কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি। নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিকই জমা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে এই হিসাব জাতীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া জমা দেওয়া হলো, এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করছেন, আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্র মেনেই সবকিছু করে। নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের হিসাব অবশ্যই জাতীয় কমিটির অনুমোদন নিয়েই দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখন দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়, তখন ডাকা হয় এ কমিটির বৈঠক। জাতীয় কমিটির সদস্যদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করে জাতীয় কাউন্সিল এবং দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, পরিমার্জন করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কী কারণে বৈঠক ডাকা হয় না তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে বিগত সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে হয়তো সভা ডাকা হয়নি।’ দলের কুষ্টিয়ার জাতীয় কমিটির সদস্য সদরউদ্দীন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় কমিটির তো কোনো কাজ নেই। তাই মিটিং ডাকা হয় না। যখন কোনো কিছুর অনুমোদন নিতে হবে বা প্রয়োজন পড়বে, তখন দলের সভানেত্রী সভা আহ্বান করবেন।’ ইসিতে দলের আয়-ব্যয় জমা দিতে আপনাদের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক মনে নেই।’ বগুড়ার জাতীয় কমিটির সদস্য আমানউল্লাহ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্ভবত ২০১২ সালের পর আর একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন নিয়মিত বৈঠক হয় না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দলের সভানেত্রী বা সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব। তারা আহ্বান করলেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার জাতীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছয় মাস পর পর বৈঠক ডাকার কথা রয়েছে। কিন্তু ২৪ মাস পার হলেও সভা আহ্বান করা হয়নি। আমরা জাতীয় কমিটির সদস্য আছি কি না তাও জানি না।’ তাদের কী কাজ বা তাদের ব্যাপারে দলের পরিকল্পনা কী, তা জানানো হয়নি বলেও জানান তিনি। রংপুরের জাতীয় কমিটির সদস্য ইদ্রিস আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হয়তো বৈঠক ডাকা হয়নি। আশা করছি শিগগিরই সভা আহ্বান করবেন দলের সভানেত্রী। খুলনা মহানগরের অ্যাডভোকেট চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে। সেগুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে গিয়েই সভা আহ্বান করার সময় পাওয়া যায়নি বলে আমি মনে করি।’