বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

যেসব সরকারি সুবিধা পাবেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় এবং সরকারি খরচে তারা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সে বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে সরকার। সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা সরকারি খরচে তাদের সরকারি বা ব্যক্তিগত আবাসস্থলে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা, তেলসহ গাড়ি, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন।
সরকারি খরচে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াও ব্যক্তিগত সহকারী এবং পরিচারক পাবেন তারা। তাদের আবাসস্থলের মেরামত, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে গণপূর্ত অধিদফতর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেবে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা।
এসব বাসভবনের আশপাশে সুউচ্চ ভবনের বাসিন্দাদের ওপর নজরদারি এবং কোনো স্থাপনা হুমকি বলে মনে হলে তা অপসারণও করতে বলেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-৪ থেকে সোমবার ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯’ এর ৪ (৩) ধারা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ আদেশ জারি করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ও তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার দায়িত্বে। আর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের একটি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও যুক্তরাজ্যে থাকেন। আর শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) দায়িত্বে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রাখতে হবে। ‘সরকার বরাদ্দকৃত বা নিজেদের মালিকানাধীন আবাসস্থলের প্রয়োজনীয় মেরামত, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা একজন ড্রাইভার ও প্রয়োজনীয় পেট্রলসহ গাড়ি পাবেন। তারা সরকারি খরচে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধাও পাবেন। জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য আবাসস্থলে সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা অ্যাম্বুলেন্স রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে এবং প্রয়োজনে বিদেশে সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন তারা।
সরকারি খরচে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, দুইজন বেয়ারা, একজন বাবুর্চি, একজন মালি ও একজন ঝাড়ুদার পাবেন তারা। ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে অন্য কোনো প্রকার সহায়তা বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বা দ্রব্যের প্রয়োজন হলে সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা তা দেবে।’ এ পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলে ‘হুমকি ও অন্তর্ঘাতমূলক অবস্থা’ মোকাবিলায় সুরক্ষিত ও নিরাপদ বেষ্টনী প্রস্তুত রাখা ছাড়াও আবাসস্থলের চারদিকে নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে বলেছে সরকার।
এ ছাড়া তাদের আবাসস্থলের আশপাশের কোনো ভবন, স্থাপনা বা অবস্থান থেকে কোনো প্রকার হুমকি সৃষ্টির মতো অবস্থা থাকলে তা অপসারণ অথবা পরিবর্তন করে দিতে বলা হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী, এদের আবাসস্থলের আশপাশে সুউচ্চ ভবনে বসবাসকারীদের ওপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রাখতে হবে। এ ছাড়া আবাসস্থলে যাতায়াতের পথ সব ধরনের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে। আবাসস্থলে সব সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রস্তুত রাখা এবং আবাসস্থলের ভেতরে যেসব স্থানে তারা (জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা) চলাফেরা করেন সেসব স্থানে সব সময় ‘সুইপিং’ নিরাপত্তা রাখতে বলা হয়েছে। এসব আবাসস্থল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ছাড়াও ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা এলার্ম বসানো, আবাসস্থলে প্রবেশের সময় সবাইকে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া আবাসস্থলে যে কোনো বস্তু, দ্রব্য বা সরঞ্জাম ঢোকানোর আগে স্ক্যান করতে হবে এবং আবাসস্থল থেকে তাৎক্ষণিক নির্গমণের জন্য এক বা একাধিক বিশেষ পথের ব্যবস্থা রাখতে বলেছে সরকার। আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আগে ওই বছরের ২০ জুন সংসদে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০১ পাস করে। পরে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে ওই বছর ২ ডিসেম্বর আইন বাতিল করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে এবং তাদের সন্তানদের নিরাপত্তায় নতুন করে আইন পাস হয়।

সর্বশেষ খবর