শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
মোদির সফরের জোর প্রস্তুতি

২০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি হবে জ্বালানি ও বিদ্যুতে অংশীদারিত্ব

২০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি হবে জ্বালানি ও বিদ্যুতে অংশীদারিত্ব

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে নতুন একটি ঋণচুক্তি করতে যাচ্ছে দুই দেশ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের পর ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল দুই দেশ। তবে এবার মোদির সফরে এ ঋণের অর্থ দ্বিগুণ হচ্ছে। ঋণচুক্তি হচ্ছে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেওয়া হতে পারে। অবশ্য বাড়তেও পারে দুই অঙ্ক। ঋণের অর্থ ব্যয় হবে বাংলাদেশের সড়ক, নৌ ও রেল পথের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। অনুদানের অর্থ ব্যয় হতে পারে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। পাশাপাশি এ সফরে বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের বিষয়ে একাধিক সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও সম্পন্ন। 

পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ’ (ইআরডি) ১০০ কোটি ডলারের ক্রেডিট লাইন স্বাক্ষর করেছিল। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এর মধ্যে ২০ কোটি ডলারকে অনুদান হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই ঋণের অর্থে মোট ১৪টি প্রকল্পের সাতটি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক সিনিয়র সচিব সুজাতা মেহতা এপ্রিলে ঢাকা সফরে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নতুন ঋণের প্রস্তাব জানিয়ে যান। সড়ক, নৌ ও রেল পথে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রকল্প প্রস্তাব চায় ভারত। পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ১৩টি প্রকল্পের একটি সম্ভাব্য তালিকা পাঠায়। যদিও এতে প্রস্তাবিত কোনো অর্থ উল্লেখ করা হয়নি। সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুধু এ ঋণের প্রকল্পগুলো অবকাঠামো উন্নয়নে সীমাবদ্ধ না রেখে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সম্প্রসারিত করতে চেয়েছেন। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত নতুন ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিলেও পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়। এর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের জন্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান হিসেবে রাখার কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই। অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলারের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার ঋণ এবং ৫০ কোটি অনুদান। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ভারতের বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে অংশীদারিত্ব। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল ও বাংলাদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ভারতের বড় দুটি বেসরকারি গ্রুপ। ইতিমধ্যে সমঝোতা স্মারকের খসড়া প্রস্তুত। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জন্য মোট ৭ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আদানি পাওয়ার কোম্পানি লি. এবং ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে রিলায়েন্স গ্রুপ। সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুযায়ী, আদানি গ্রুপ ভারতের কোনো একটি রাজ্যে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুই দফায় চারটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ভারতের রাজ্য আইন অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৮ শতাংশ সেই রাজ্যকে দিয়ে বাকিটা বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। এ জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এর বাইরে রিলায়েন্স গ্রুপ বাংলাদেশে ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। এ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ভারতের অরুণাচলের কারইয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে রিলায়েন্সের সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এ বিদ্যুতের প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। ভারতের আরেক শিল্প গোষ্ঠী হিরান্দানি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা উপকূলের কাছে যে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে, সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য এ জায়গা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির আলোচনা চলছে। এ ছাড়া আসামের নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত। এখন পাইপলাইন স্থাপনে জরিপের কাজ চলছে। মোদির সফরে এ দুই প্রকল্প নিয়েও সমঝোতা হতে পারে। এ ছাড়া এ সফরে বহরমপুর (ভারত)-ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) গ্রিড আন্তঃসংযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট, ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, অন্যান্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হবে। জানা যায়, মোদির সফরে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হবে। 

মোদির সফর আয়োজনের জোর প্রস্তুতি : নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে ঢাকায় চলছে জোর প্রস্তুতি। নিরাপত্তার দিকগুলো খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও প্রটোকল বিভাগের সঙ্গে কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও বৈঠক করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। মোদি ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীদের সফরসূচিও সমন্বয় করা হচ্ছে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসার আগের রাতেই চলে আসবেন। আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা আসার সময় আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। ইতিমধ্যে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর অগ্রাধিকার দল ঢাকা সফর করে গেছে। আগামী রবিবার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে আসবেন ব্ল্যাক ক্যাট ও এসপিজির সদস্যরা। মোদির সফরের আগেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ঢাকা সফর করে সব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। মোদির সঙ্গে আসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, সচিব ও প্রতিনিধি।

সর্বশেষ খবর