শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষা

স্থায়ী কমিটিতে আসছে নতুন মুখ

নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বড় একটি অংশের ব্যর্থতার দায়ভার পড়েছে দলের সর্বস্তরে। বিশেষ করে এই নেতাদের ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে দলের হাইকমান্ডকেও। এ অবস্থায় নতুন নেতৃত্ব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে নতুন নেতৃত্বের চিন্তাভাবনা করছেন। এরই প্রেক্ষাপটে ঈদুল ফিতরের পর দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন বলেও প্রত্যাশা তাদের। সর্বশেষ বিএনপির কাউন্সিল হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর অন্তর কাউন্সিল করার কথা। কিন্তু কয়েক দফা চেষ্টা করেও কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। অবশ্য কাউন্সিল করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে কয়েক দফা সময়ও নেওয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। জানা যায়, বিএনপির সর্বস্তরের কমিটিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব রাখার চিন্তাভাবনা করছেন খালেদা জিয়া। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে যারা নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন তাদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। কমিটিতে রাখার জন্য আন্দোলনে থাকা নেতাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাবলিক পারসেপশনে দলে যারা বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ বলে খ্যাত তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ঈদের পরই বিএনপিতে পুরোদমে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই নতুন নেতৃত্ব জরুরি হয়ে পড়েছে। আমার মত হচ্ছে, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। এরপর কাউন্সিল করে ভোটাভুটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। তৃণমূলের কমিটি করতে যাদের জেলার আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করা হবে তারা কোনোভাবেই নতুন কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না। এভাবেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃত্ব নির্বাচিত করা গেলে দলকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’ সূত্রমতে, বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনকে সর্বস্তরে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বেগম জিয়া। ঈদের আগেই যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটিই নতুন আদলে গড়তে চান বিএনপি-প্রধান। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়াতে ‘এক নেতার এক পদ’ রাখারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ দলের জাতীয় কাউন্সিলে এ উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত কিছু প্রভাবশালী নেতার আপত্তির কারণে হাইকমান্ড এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে এবার বেগম জিয়া ‘এক নেতার এক পদ’-এর ব্যাপারে অনড় অবস্থানে বলে জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে একঝাঁক নতুন মুখ আসতে পারে। বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে স্থায়ী কমিটি থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন অন্তত পাঁচজন সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন ড. আর এ গনি, এম শামসুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, বেগম সারওয়ারী রহমান ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে অন্তরীণ সাকা চৌধুরী। এ ছাড়া মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর স্থায়ী কমিটির ওই পদ এখনো শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হলে পদাধিকারবলেই তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য হবেন। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের থেকে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে জানা গেছে। ১৮ সদস্যের ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে বিচারপতি টি এইচ খান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যের কারণে তেমন কর্মক্ষম নন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন রাজিয়া ফয়েজ। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলচ্যুত হওয়ায় ওই পদও শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। নানা কারণে আরও দুই থেকে তিন জন ভাইস চেয়ারম্যান বাদ পড়তে পারেন। কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে স্থায়ী কমিটিতেও আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যুগ্ম মহাসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পর্যায় থেকে বেশ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আট সদস্যের যুগ্ম মহাসচিব পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালনকারী কয়েকজন পদোন্নতি পেয়ে স্থায়ী কমিটিতে কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জায়গা করে নিতে পারেন। সাত বিভাগীয় সম্পাদক ও আট সদস্যের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদেও নতুন মুখ আসবে। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সম্পাদকীয় পদে ১২১ এবং সদস্যপদে ২৬৫ জনের মধ্যেও এবার আন্দোলনে থাকা তরুণ নেতৃত্বের বড় একটি অংশই স্থান পাবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তৃণমূল পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে দেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাটোরে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বগুড়ায় ভিপি সাইফুল ইসলাম, লালমনিরহাটে আসাদুল হাবিব দুলু, ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফয়সাল আমিন, জয়পুরহাটে মোজাহার হোসেন প্রধান, সিরাজগঞ্জে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমিরুল ইসলাম খান আলীম আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা বিভাগে নরসিংদীতে খায়রুল কবীর খোকন, নারায়ণগঞ্জে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও টাঙ্গাইলে সামসুল আলম তোফাও আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগে মহানগরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবের রহমান শামীম; চট্টগ্রাম উত্তরে আসলাম চৌধুরী; কক্সবাজারে লুৎফুর রহমান কাজল; নোয়াখালীতে মোহাম্মদ শাহজাহান; কুমিল্লায় হাজী ইয়াসিন ও মো. আবদুল আউয়াল খান; সিলেট বিভাগে অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান; সুনামগঞ্জে মিজানুর রহমান চৌধুরী; খুলনা বিভাগে নজরুল ইসলাম মঞ্জু; কুষ্টিয়ায় মেহেদী আহমেদ রুমি ও অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন; মেহেরপুরে মাসুদ অরুণ; যশোরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী কাউন্সিলে তাদের দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার প্রত্যাশা তৃনমূল বিএনপির। তাদের মতে কাউন্সিলে যোগ্যদের পুরস্কার আর অযোগ্যদের তিরস্কার করা না হলে ভবিষ্যতে দল ও আন্দোলনে বিএনপিতে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে দলের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে কারারুদ্ধ নেতা-কর্মীদের বের করে আনা। এরপর দলকে নতুনভাবে গোছানো হবে। আন্দোলন উপযোগী করার জন্য নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সেই চিন্তাও রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে।’
নতুন নেতৃত্ব আসছে ঢাকায়ও : মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ- গত বছর ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সে নির্বাচনের বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে এ বছর জানুয়ারিতে সারা দেশে কম-বেশি আন্দোলন হলেও পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। ব্যর্থতার দায় ছিল কেন্দ্রীয় অঙ্গ সংগঠনগুলোর ওপরও। এ কারণেই ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোয় নতুন নেতৃত্ব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত তিন মাসের ফলাফলশূন্য আন্দোলনের দায়ভারও পরিবর্তিত নেতৃত্বের ঢাকা মহানগর বিএনপির দিকে ইঙ্গিত তৃণমূল বিএনপির। তৃণমূলের মতামতসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই রাজধানীতে নতুন কমিটি করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরুও হয়ে গেছে। গেল বছরের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে মহানগর আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইলের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই মাসে কাউন্সিল করে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক দফায় উদ্যোগ নিয়েও থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি নেতারা। প্রায় ১০ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অবশ্য কয়েক মাস ধরেই মামলার হুলিয়া নিয়ে দায়িত্ব পাওয়া নেতারা আত্মগোপনে। এখন পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে আসতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর