বুধবার, ১৭ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করছে : প্রধানমন্ত্রী

ছয় দিনের ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নাগরিক সংবর্ধনা, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্যসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। সোমবার বিকালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) যুক্তরাজ্য শাখার কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যকে একটি মহান দেশ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্রিটেনের আরও সহায়তা কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করছে। তবুও ব্রিটেনের কাছ থেকে আরও সহায়তা আমাদের প্রয়োজন। ব্রিটেন একটি মহান দেশ এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। আমি আশা করছি, তারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ সংক্রান্ত অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান কিথ ভাজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের জন্য এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেবার পার্টির এমপি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ এবং ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের বেশ কয়েকজন সদস্য বক্তৃতা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. আবদুল হান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রুশনারা আলী, ড. রূপা হক, জিমি ফিটজপ্যাট্রিক, এ্যান মেইন, কেট ওসামার, ক্যাথরিন ওয়েস্ট, জোনাথান শ’, অ্যান্ডি স্লেটার, ব্যারোনেজ পলা উদ্দিন এবং সিপিএ যুক্তরাজ্য শাখার প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু টাগিসহ অন্তত ৩০ জন ব্রিটিশ এমপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য সুস্পষ্ট যে, আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তিনি বলেন, সব আর্থ-সামাজিক খাতে আমরা অগ্রগতি লাভ করেছি। নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছি। এ ছাড়া বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, চিরদিনের জন্য এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করার একটি অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে আমরা সব সমস্যা সমাধান করতে পারি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের মতো সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জন্য সব সময় কাজ করছে। শ্রমিকরা যাতে তাদের কর্মস্থলে সুষ্ঠু পরিবেশ পায় সে লক্ষ্যে সরকার যতœ নিতে শুরু করেছে। তার মেয়াদে দারিদ্র্য হার ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে উল্লেখ করে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার আশা ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ব্যারোনেস ও পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উন্নত দেশে এটি একটি বড় কাজ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু আপনারা ভাগ্যবান যে, আপনারা গণতন্ত্র ব্যবস্থা উপভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাও ওয়েস্টমিনস্টার ধরনের গণতন্ত্র অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। টিউলিপ সিদ্দিকের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিউলিপ যখন জন্ম নেন তখন তিনি লন্ডনেই ছিলেন। আমার এখনো মনে আছে, আমি প্রথমবার তাকে ‘টিউলিপ’ ফুলের মতোই দেখেছিলাম। এখন সে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। আমি তার জন্য গর্বিত এবং তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
প্রথমবার যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুভূতি ব্যক্ত করে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন এলাকা থেকে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হওয়া একটি বিরাট সম্মানের বিষয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ সরকারের সর্বোচ্চ পাঁচটি পদে মহিলা রয়েছেন উল্লেখ করে সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলেন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আপনাকে পেয়ে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং আপনি গত নির্বাচনে সফল হওয়ার ব্যাপারে আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশ আইটি খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন গ্রামগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। স্বাগত বক্তৃতায় কিথ ভাজ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাহসের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছলে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ স্বাগত জানান।

সর্বশেষ খবর