বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

এবার এমপি পদ যাচ্ছে লতিফের

বহিষ্কারের চিঠি স্পিকারের টেবিলে

এবার এমপি পদ যাচ্ছে লতিফের

অবশেষে এমপি পদ হারাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তাকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের চিঠি হাতে পেয়েছেন স্পিকার। দীর্ঘ আট মাস পর চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্পিকারকে অবহিত করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদের বিষয়ে আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী (সা.), হজ ও তাবলিগ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে তাকে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা ও পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর তার দলের সাধারণ সদস্য পদও খারিজ করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্পিকারের কাছে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি গত ৫ জুলাই সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়। এদিকে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ থাকবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী দলের সদস্য পদ হারানোর কারণে তার সংসদের সদস্য পদ বাতিল হবে। এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে কারও সংসদ সদস্য পদ যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। অতীতে তেমন রেকর্ড নেই। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময় অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত এমপি আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার এমপি পদ থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার এমপি পদ বহাল থাকে। তবে দল থেকে বহিষ্কার হলে এমপি পদ বাতিল হবে বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। দল চাইলে তার এমপি পদ বাতিল হবে। কারণ, তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে এমপি নির্বাচিত হতে পারতেন না। তিনি আরও বলেন, সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি স্পিকার নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে সংসদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, আইন দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের চিঠিটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। কমিশন তার বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে। কমিশনের নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবে সংসদ সচিবালয়। উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। গত ২৩ নভেম্বর রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। গত ২৯ জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।

সর্বশেষ খবর