বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাকার চূড়ান্ত রায় ২৯ জুলাই

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। ২৯ জুলাই রায় ঘোষণা করা হবে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন। গতকাল ১৩ম দিনের মতো এ মামলার আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামির পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক আরও একটি আপিলের শুনানি শেষ হলো। এটি হবে মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিল বিভাগের পঞ্চম রায়। এর আগে ১৬ জুন সাকা চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। আদালত থেকে বেরিয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশে ছিলেন না। তিনি ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে চলে যান। আমরা আশা করি আদালত এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে দেশে ছিলেন না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এটি মিথ্যা। আসামির তাণ্ডব এবং নির্যাতনের কথা সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে এসে বলে গেছেন। আমি আশা করব, যে চার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন, তা বহাল থাকবে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ দণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ২৩টির মধ্যে বিচারিক আদালতে প্রমাণিত হয় নয়টি অভিযোগ। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ১৪টি অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয় তাকে। ট্রাইব্যুনালের এ সপ্তম রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথমবারের মতো দণ্ডিত হন বিএনপির কোনো নেতা। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন সাকা চৌধুরী। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ করে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ অভিযোগ। এর মধ্যে প্রমাণিত তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সাকা চৌধুরীকে। আর দ্বিতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম অভিযোগে ২০ বছর করে এবং সপ্তদশ ও অষ্টাদশ অভিযোগে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় আসামিকে। তবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয় বাকি সব অভিযোগ থেকে।
কিশোরগঞ্জের দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-২ ওই দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে আবেদন করেন প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ। সৈয়দ মো. হুসাইন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলীর ছোট ভাই। হুসাইন একাত্তরে তিনি নিকলী উপজেলার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন।  মোহাম্মদ মোসলেম প্রধান তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে হত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন জানায়। এদিকে কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন প্রধানকে গ্রেফতার করেছে নিকলী পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে তার বাড়ি থেকে কিশোরগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ খবর