সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাবেক সভাপতি-সম্পাদকরা উপেক্ষিত আওয়ামী লীগে

সাবেক সভাপতি-সম্পাদকরা উপেক্ষিত আওয়ামী লীগে

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপেক্ষিত। সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বে থাকলেও বর্তমান কমিটিতে আছেন মাত্র পাঁচজন। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে একমাত্র ওবায়দুল কাদেরের ঠাঁই হলেও বাকিদের খবর নেই। ঊনসত্তরের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ দীর্ঘদিন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দলের নেতৃত্বে থাকলেও এখন তিনি দলের উপদেষ্টা। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নূরে আলম সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নেই নূরে আলম সিদ্দিকী। তার কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাজাহান সিরাজ। পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ইসমত কাদির গামাকে করা হয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সেই ইসমত কাদির গামারও স্থান হয়নি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। ১৯৭২-৭৩ সালে সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব পালনকারী এম এ রশিদ এখন প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন নিয়ে আছেন। ১৯৭৭-৮১ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহালুল মজনুন চুন্নুও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ১৯৮১-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে তাকে দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক করা হলেও এখন দলে কোনো পদ-পদবি নেই। তার সময়ের সাধারণ সম্পাদক আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও এখন কেন্দ্রীয় পদে নেই। অবশ্য তিনি দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের টিকিটে পটুয়াখালী থেকে এমপি হয়েছেন। ১৯৮৩-’৮৫ সাল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল মান্নান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তারা দুজনই দশম জাতীয় সংসদের এমপি। জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও আবদুল মান্নানকে কোনো পদে রাখা হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৬-’৮৮ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। তাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলেও বাদ পড়েছেন সংস্কার ইস্যুতে। এখন অনেকটাই নিভৃতেই রয়েছেন তিনি। তার সময়ের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাত্র। তিনি ফরিদপুর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাবিবুর রহমান হাবিব সভাপতির দায়িত্ব পালনকালেই দলবদল করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় শাহে আলমকে। শাহে আলম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক। তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের দলে অবস্থান উপ-প্রচার সম্পাদক। ১৯৯২-৯৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে। সাধারণ সম্পাদক ইকবালু রহীম সংসদের সদস্য ও হুইপ হলেও দলীয় কোনো দায়িত্বে নেই। ১৯৯৪-৯৮ সালে দায়িত্ব পালনকারী সভাপতি এনামুল হক শামীম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাত্র। অথচ তার হাতে তৈরি নেতারাও কেন্দ্রীয় কমিটির গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না এখন নিষ্ক্রিয়। ১৯৯৮-২০০২ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী বাহাদুর বেপারী কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নেই। তাকেও দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকনের অবস্থানও একই। ২০০২-০৬ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী লিয়াকত শিকদারদের দলীয় অবস্থান নেই। সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নেই। ২০০৬-১১ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ছাত্র রাজনীতি থেকে চার বছর আগে বিদায় নিলেও এখনো কোথাও স্থান হয়নি। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সম্মেলনে সাবেক নেতা হলেন এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলমও। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছর ধরে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ওবায়দুল কাদের। কেবল তিনিই আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে রয়েছেন। সরকারেও দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর। ছাত্রলীগের শীর্ষ পদেই শুধু নয়, সহ-সভাপতি বা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী অনেক নেতাই এখন উপেক্ষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। আবার কাউকে কাউকে সান্ত্বনা দিতে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক। গণহারে এ সহ-সম্পাদক করায় অনেকেই নিজেদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। ১৯৬৯-১৯৭০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন আ স ম আবদুর রব। তিনি এখন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী শেখ সহিদুল ইসলাম ও এম এ রশিদ কেউই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নেই। শেখ শহিদুল ইসলাম কয়েক দফা দল বদল করে এখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে সভাপতি হন মনিরুল হক চৌধুরী। প্রথমে জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন এম এ আউয়াল।

সর্বশেষ খবর