সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকারের নির্দেশ

খেলাপি কমাও, ঋণ বিতরণ বাড়াও

গুণগত মান বজায় রেখে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় আরও জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর প্রতি সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে : ‘ঋণ বিতরণ বাড়াও খেলাপি কমাও’।
গতকাল সরকারের বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ধরনের তাগিদ দেওয়া হয়। সকালে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকিং সচিব ড. এম আসলাম আলম। এতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল এবং বেসিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসেই আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করি; এটি তারই অংশ। এখানে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স, ডিজিটালাইজেশনসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে গুণগত মান বজায় রেখে ঋণ বিতরণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানমুখী এ দুটি খাতের ঋণ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এ ধরনের ঋণে খেলাপির পরিমাণও কম বলেও উল্লেখ করা হয়। খেলাপি ঋণের ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি কিছুটা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি মন্দ ঋণের হার কমিয়ে আনতে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং বিভাগের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ ঋণই আদায় অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। ব্যাংকগুলো বলছে, তারা খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ে আদালতে মামলা করলেও এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এ ছাড়া স্টে অর্ডার দিয়ে ঋণগ্রহীতারা অনেক মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দিচ্ছে। শেষে পৃথক বেঞ্চ গঠন করে এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি। জুন শেষে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত বছর ডিসেম্বরে যা ছিল ১৬ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এ সময়ে সোনালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ হয়েছে ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর