মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

দলত্যাগী নেতাদের ঘরে ফেরাতে মরিয়া বিএনপি

দলত্যাগী নেতাদের ঘরে ফেরাতে মরিয়া বিএনপি

নতুন, পুরানসহ দলত্যাগী সব নেতাকে ‘জাতীয়তাবাদী শক্তি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে মরিয়া বিএনপির হাইকমান্ড। প্রকাশ্যে খুব বেশি তৎপরতা না থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রক্রিয়াটি অনেক দূর এগিয়েছে। ক্ষমতাসীন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র ও নানামুখী বাধা-বিপত্তির আশঙ্কায় বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে নিজেদের গুরুত্ব হারানোর ভয়ে ২০-দলীয় জোটের একটি শরিক দল ও তার সমর্থক কিছু বিএনপি নেতা পরোক্ষভাবে পুরনো এ ডাকসাইটে নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অপ্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করেছেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অদূর ভবিষ্যতে দল ও জোটে কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে ভিতরে ভিতরে উঠেপড়ে লেগেছেন দলের দুঃসময়ে বার বার আত্মগোপনে চলে যাওয়া আঁতকে ওঠা ওই নেতারা। তবে শত মামলা-হামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন, হতাশা আর বিপদের মুখেও সারা দেশের তৃণমূল নেতারা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পুরনো এই সহচরদের আবারও দলে ফিরে আসার প্রক্রিয়ার খবরে। অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমদ, কাজী জাফর আহমদ ও ড. কোরেশীর মতো নেতারা বিএনপিতে ফেরার পরপরই জোটে আসার প্রক্রিয়া শুরু হবে গণফোরাম, জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মতো দলগুলোর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দল সমর্থক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ কয়েকজনকে অতীতে দলত্যাগী পুরনো নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, পিডিবির চেয়ারম্যান ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, জাপা (একাংশের) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে তা অনেক দূর এগিয়েও নিয়ে গেছেন তারা। সর্বশেষ বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাক্ষাৎ করেন। ওইদিন রাতে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে আসেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর ঘণ্টাখানেক আগে তিনি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গেও তার বারিধারার বাসায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে আসেন। এসব বৈঠকে দল পুনর্গঠনসহ আগামী দিনের করণীয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বর্তমানে থাইল্যান্ড সফরে আছেন। ঈদের পরপরই তারা সপরিবারে এ সফরে যান। ইতিমধ্যে ব্যাংককে তাদের মধ্যে একাধিকবার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে বলেও জানা যায়। অধ্যাপক বি. চৌধুরী ৩০ জুলাই এবং কর্নেল অলির ২ আগস্ট দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ইচ্ছা ও নির্দেশে সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। পুরনো নেতাদের যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তাদের হয় দলে, না হয় জোটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বি. চৌধুরী ও অলি আহমদের দলের ফেরার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ ছাড়া আরও অনেক নেতা আছেন যারা ইতিমধ্যে দলে ফেরার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। ভালো ও যোগ্য নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে যারা বিরোধিতা করেন, তারা কেউ দলের ভালো চান না এবং তাদের এই না চাওয়াটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ ও উদ্দেশ্যমূলক। তবে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে নেতাদের বলানোর চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত কেউ প্রকাশ্যে নেতিবাচক কিছু বলেননি এ ব্যাপারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ভাষ্যমতে, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দলে ফিরতে চাইলে সে সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়া কারা চালাচ্ছেন বা কতদূর এগিয়েছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রের ভাষ্য হলো, প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলের কিছু সুবিধাবাদী মাঝারি গোছের নেতা চাচ্ছেন না বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলির মতো নেতা বিএনপির নেতৃত্বে আবারও ফিরে আসুন। বিশেষ করে দলের ভিতরে অযোগ্য, অপদার্থ ও ব্যর্থ নেতাদের একটি বড় অংশই তাদের দলে আনার পথে পরোক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কারণ বি. চৌধুরী, অলি আহমদ ও কাজী জাফরের মতো নেতারা বিএনপিতে এলে একদিকে যেমন তাদের আধিপত্য খর্ব হবে এবং সরকারের সঙ্গে কারও কারও আঁতাতের কথাসহ বিভিন্ন রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থিক আয়-উপার্জনের উৎসও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও জামায়াত সমর্থক মাঝারি গোছের কিছু বিএনপি নেতা মরিয়া হয়ে লেগেছেন বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমদ, ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর মতো নেতারা যাতে আর দলে না ফিরতে পারেন। কারণ এ ধরনের যোগ্য ও ডাকসাইটে নেতারা ফিরে এলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর তাদের আর তেমন কোনো গুরুত্ব থাকবে না।
 বিএনপির আরেকজন নীতিনির্ধারক বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন মামলায় সাজামূলক রায় দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে সরকার নতুন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পরিকল্পনা করছে বলে শোনা যায়। এমনটি যদি করার চেষ্টা সরকার করেই, তবে বি. চৌধুরী, অলি আহমদের মতো নেতারা দলের ভিতরে থাকলে অন্তত বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমেও তার প্রতিবাদ জানাতে পারবেন। আর তাদের মতো নেতারা কখনো আÍগোপনে কিংবা পালিয়ে যাবেন না, যেমনটা বর্তমানে খালেদা জিয়ার আশপাশে থাকা নেতারা করেন।

সর্বশেষ খবর