মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

সহজেই ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব

প্রকৌশলী শহীদুল হাসান

সহজেই ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব

ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা সহজেই দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল হাসান। তার মতে, ঢাকা নগরীকে যানজটমুক্ত করা হয়তো জটিল কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে পুরোপুরি পরিত্রাণ দেওয়া সম্ভব। ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য স্টর্ম ড্রেনেজ লাইনগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখা ও ড্রেনেজ সিস্টেমগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা দূর করা যায়। এর জন্য শুধু প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক সমন্বয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন এই প্রকৌশলী। বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের (বিডব্লিউপি) সভাপতি শহীদুল হাসান বলেন, ঢাকার আজকের জলাবদ্ধতা বহু বছরের পুঞ্জীভূত কর্মফল। মহানগরের ড্রেনেজের জন্য যে খালগুলো ছিল সেগুলোকে আমরা ভরাট করে রাস্তা করেছি বা দখল করেছি। সেই খালগুলোর বেশির ভাগই এখন আর নেই। এখন পানি নিষ্কাশন হচ্ছে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ দ্বারা তৈরি ওয়াসার স্টর্ম ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে। এই ড্রেনেজ সিস্টেমটি ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলোর পাশে থাকা ছোট ছোট ড্রেনগুলোর মাধ্যমেই বৃষ্টির কারণে জমা পানি বৃহৎ আকারে স্টর্ম ড্রেনেজে গিয়ে পড়ার কথা। সেই ছোট ড্রেনগুলোও ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না, আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ হয়ে থাকছে। পাশাপাশি কংক্রিটের শহরে পরিণত হওয়ায় ঢাকার মাটিও আর সেই মাত্রায় পানি শোষণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, বর্ষায় যে পরিমাণ পানি আসছে সেগুলো জমা হওয়ার জন্য যে পরিমাণ পুকুর বা খাল প্রয়োজন তাও এখন আর অবশিষ্ট নেই। ঢাকায় শুধু হাতিরঝিল ও গুলশান লেক ছাড়া আর কোনো পুকুর বা খাল কোথাও নেই। তাই বর্তমান বাস্তবতায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য বিদ্যমান ড্রেনেজ সিস্টেমটিকে সব সময় পরিষ্কার রাখার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, স্টর্ম ড্রেনেজ ও তার সংযোগ ড্রেনগুলো কোনো অবস্থাতেই পরিষ্কার থাকছে না। উল্টো বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৌশলী শহীদুল হাসান বলেন, ঢাকাকে যানজট থেকে মুক্ত করা হয়তো জটিল কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। যদি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সঠিক সমন্বয় সম্ভব হয়। কারণ ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কাজগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সংস্থা জড়িত। একেক সংস্থার দায়িত্ব ও কর্মপরিধি একেক রকম। পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কাজ রাস্তার পাশের ছোট ড্রেনগুলোর মাধ্যমে ওয়াসার বড় আকারের স্টর্ম ড্রেনে পানি পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, ওয়াসা পানি সরবরাহের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের দায়িত্বেও আছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। সেক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের একজন প্রতিনিধি আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে, তার সঙ্গে রয়েছেন কিছু প্রকৌশলী। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে যে পানি নিষ্কাশনের সমস্যাগুলো দূর করবেন তা কখনোই হচ্ছে না। শহীদুল হাসান বলেন, আরেকটি বড় সমস্যা বছরের শেষ নাগাদ বাজেটে বরাদ্দ টাকা খরচ করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়া। যুগ যুগ ধরে আমরা এই চক্র থেকে বের হতে পারছি না। নতুন বছরে যাওয়ার আগে পুরনো বছরের টাকা খরচ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এসব কারণেও অনেক ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। থাকছে না কোনো সমন্বয়। দীর্ঘ আট বছর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শহীদুল হাসান বলেন, বাস্তবতা মেনেই এখন জলাবদ্ধতা দূর করতে স্টর্ম ড্রেনেজের সিস্টেমে বড় ধরনের ওভারহোলিং, আপগ্রেডেশন ও ক্লিনিং করতে হবে।
অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের আগেই বর্তমানে থাকা ড্রেনেজ নেটওয়ার্ককে পুরোপুরি পরিষ্কার করে সেখানে থাকা পাম্পগুলো চালু রাখতে হবে। এ ছাড়া বর্ধিত ঢাকার যেসব এলাকায় এখনো স্টর্ম ড্রেনেজ সিস্টেম স্থাপন করা সম্ভব হয়নি সেগুলো দ্রুত চালু করতে হবে। এগুলো খুব সহজেই সম্ভব বলে আমি মনে করি। এই দায়িত্ব শুধু সেখানকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের। বাজেট খুব একটা সমস্যা বলে আমি বিশ্বাস করি না। যে আকারের উন্নয়ন বরাদ্দ এখন দেওয়া হচ্ছে তার যদি অপচয় না হয় তাহলে বাজেট কোনো সমস্যাই নয়।

সর্বশেষ খবর