মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভায় জাহাজ ভাঙা আইনের অনুমোদন

নিয়ম না মানলে জরিমানা-দণ্ড

শাস্তি ও আর্থিক জরিমানার বিধান রেখে বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৫-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইন অনুযায়ী সরকার এ ধরনের শিল্পের জন্য অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেবে এবং সে অঞ্চলের বাইরে কেউ শিল্প গড়লে আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাহাজ ভাঙার কাজে নিয়ম না মানলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি, ইয়ার্ড নির্মাণ ও আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে বিভিন্ন মেয়াদে এ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আইন-২০১৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইনের আওতায় ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ড’ গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয়, সংস্থা, শিপ রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই বোর্ডে থাকবেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হবেন এ বোর্ডের চেয়ারম্যান। বোর্ডের জন্য একজন মহাপরিচালক নিয়োগ দেবে সরকার। তিনি বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই বোর্ড ইয়ার্ড স্থাপনের অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র দেবে। রিসাইক্লিং ফ্যাসালিটি প্ল্যান তৈরি করবে। শ্রমিক নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ, দূষণ রোধ ও পরিবেশের বিষয়গুলো দেখবে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মান নিশ্চিত করতে পরিবেক্ষণ করবে। সচিব জানান, এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষা, কাজের পরিবেশ, সামুদ্রিক পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় আইনের এই খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে। প্রস্তাবিত আইনে সাতটি অধ্যায় ও ২৯টি ধারা রয়েছে। এর আওতায় ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ জোন’ হবে। সেখানেই ইয়ার্ড করতে হবে।
 মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ আইনের আওতায় বিভিন্ন শাস্তির বিধান তুলে ধরে বলেন, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ডের অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি করলে বা ভাঙলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জাহাজ আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, বা ছয় মাসের কারাদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ড নির্মাণ করলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা, বা এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় কেউ যদি ‘যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া’ সহযোগিতা না করে, সেক্ষেত্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে পেট্রোলিয়াম আইন-২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৯৩৪ সালের পেট্রোলিয়াম অধ্যাদেশটি ১৯৮৬ সালে সংশোধন করা হয়। সেই অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম আমদানি, পরিবহন ও মজুদ বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আইন বা বিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে শাস্তি ছিল তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড। অনুমোদিত আইনে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর