শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুই কিশোরী হত্যা নিয়ে রহস্য

দুই কিশোরী হত্যা নিয়ে রহস্য

দুই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে। যদিও উভয় পরিবারের দাবি- ধর্ষণের পরই বিষপানে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপীকে। এরই মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটনের কাজ শুরু করেছে পুলিশ ও সিআইডি।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা বেল্লাল শিকদার বাদী হয়ে রানা ও মেহেদিসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, সফট ড্রিংকসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করানো হয়েছে। এতেই তাদের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে নিহতদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে সুমাইয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মোস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানদার সূর্য বেগম জানান, বিকালে (বৃহস্পতিবার) আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে দেখি দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী আরেক দোকানদার জাহাঙ্গীর নাগাছি জানান, দেখি দুটি মেয়েকে ভ্যানে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দুটি ছেলে। সুমাইয়ার মা আসমা বেগম জানান, আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন সুমাইয়ার মতো কোনো মেয়েকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়। হ্যাপীর চাচী কেয়া বেগম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সুমাইয়ার বাবা বেল্লাল শিকদার দাবি করেন, তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান জানান, তিন দিন ধরে তারা স্কুলে অনুপস্থিত। তবে তারা মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। গতকাল সকালে একই গ্রামের রানার মা সালমা বেগম এবং মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্যরা পলাতক রয়েছেন। রানা একই এলাকার শওকত খলিফার ছেলে এবং মেহেদি ফজজুল কবিরের ছেলে। মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়েকুজ্জামান জানান, ধারণা করা হচ্ছে, একই গ্রামের রানার সঙ্গে সুমাইয়া ও হ্যাপীর সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। এরই জের ধরে ওই ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবকই হচ্ছে মেহেদি ও রানা। আটককৃত শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা দুই স্কুলছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে। জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোনো নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ছোট বাজারের পাশে পুকুরপাড়ে বৃহস্পতিবার বিকালে চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে! কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী দেখতে পায় দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে নেওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রী। গতকাল সকালে সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, সুমাইয়া ও  হ্যাপী মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সুমাইয়া মোস্তফাপুর গ্রামের বেল্লাল শিকদারের মেয়ে এবং হ্যাপী হাবিব খানের মেয়ে। দুজন একসঙ্গে স্কুলে যেত, ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় দুই বান্ধবী। সন্ধ্যার মধ্যে আকাশ ভেঙে দুই পরিবারের কাছে খবর আসে মৃত্যুর।

সর্বশেষ খবর