শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
নির্বাচনকালীন সরকার

আলোচনায় হাইকোর্টের দুই ফর্মুলা

জাতীয় সংসদের নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া দুটি ফর্মুলা এখন আলোচনায়। প্রথম ফর্মুলায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন ৫০ জন মন্ত্রী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওই সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলো থেকে ভোটের হারের অনুপাতে মন্ত্রী নেওয়া হবে। হাইকোর্টের দ্বিতীয় ফর্মুলায় বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর ক্ষমতায় থাকবে। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল সর্বশেষ এক বছর ক্ষমতায় থাকবে। আদালত বলেছেন, প্রথম ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। তবে দ্বিতীয় ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। হাইকোর্ট মনে করে, ফর্মুলাগুলো হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চিত আক্রমণাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার উপায়। এদিকে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’-এর পরিচালক ড. শাহদীন মালিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রশ্নের সমাধান রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় করবেন। এটা আদালতের বিবেচ্য বিষয় নয়। এসব ব্যাপারে আদালত মন্তব্য করে অহেতুক জটিলতা ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, ১৫৩ এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে বৈধ বলেছেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের রিট জুরিসডিকশনে এখতিয়ার হলো, কোনো কার্যক্রম বা পদ্ধতি আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে বৈধ না অবৈধ তার বিচার করা। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার কতজনের হবে তা সম্পূর্ণরূপে নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার। এসব ব্যাপারে হাইকোর্টের মন্তব্য করা কাম্য নয়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৯ ধারার বৈধতা প্রশ্নে জারিকৃত রুল খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সম্প্রতি এই অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৯ ধারার বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল গত বছরের ১৯ জুন খারিজ করে দেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় পার্টি নেতা খোন্দকার আবদুস সালাম হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন। রিট খারিজের পূর্ণাঙ্গ এই রায় সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। রায়ে বলা হয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান অবৈধ নয়। নির্বাচনে কোনো প্রার্থী না থাকলে একক প্রার্থীর বিজয়ী ঘোষণা করা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এ কারণেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ এমপির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। প্রকাশিত রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে অসীম বিরোধ সমাধানে কোনো ফর্মুলাই জাতির উপকারে আসবে না, যতদিন না রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিক ও ঐকান্তিক হয়। নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে হাইকোর্টের ফর্মুলা দুটি হলো :
 

প্রথম ফর্মুলা : ৫০ জন নতুন মন্ত্রী নিয়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একাদশ সংসদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে অথবা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরে এ মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের এমপিরা মন্ত্রী হবেন। রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী থাকার অনুপাত নির্ধারণ করা হবে দশম জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কত শতাংশ ভোট পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। তবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে পাঁচজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী দলগুলো থেকে নেওয়া যেতে পারে।
 

দ্বিতীয় ফর্মুলা : সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর দেশ শাসন করবে। এর পরের এক বছরের জন্য দেশের ক্ষমতা যাবে প্রধান বিরোধী দলের হাতে। তবে প্রধান বিরোধী দলকে দেশ পরিচালনার ভার দেওয়া যাবে শুধু যদি দলটি সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী দলের চেয়ে কমপক্ষে অর্ধেক ভোট পেয়ে থাকে। এরপর প্রথম ফর্মুলা অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নেতৃত্বে গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা। আর যদি প্রধান বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের অর্ধেক ভোটও না পেয়ে থাকে, তবে পাঁচ বছরই দেশ চালাবে ক্ষমতাসীন দল। দুটি ফর্মুলা ছাড়াও হাইকোর্ট বলেছেন, একটি মুক্ত, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো, নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা ও নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা এবং একইভাবে নির্বাচন কমিশনকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া। এ জন্য সব রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় আন্দোলন বা সহিংস রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন থেকে বিরত থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর