শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

এনআইডি কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্য টর্চার সেল!

বিনামূল্যের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ নিতে এসে সময় ও অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের অসতর্কতায় বিনামূল্যের সেবা নিতে নাগরিকদের মোটা টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।  প্রসঙ্গত, এ মাসেই বিনামূল্যে পরিচয়পত্র সংশোধন ও ডুপ্লিকেট কার্ড নেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে সেবা দিতে হবে লাখো নাগরিককে। এ দায়িত্ব পালন করছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গতকাল আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভোটার তালিকা প্রকল্প কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মানুষ নিজেদের পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধন ও ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্রের জন্য অপেক্ষমাণ। তারা কাজের ধীরগতি নিয়ে দারুণ ক্ষুব্ধ। অনেকেই জানান, এখানে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বিপদ। এ জন্য অনেকে মারধরের শিকারও হচ্ছেন। সেবা নিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হলেই তাকে নেওয়া হয় ‘টর্চার সেলে’। সেখানে করা হয় মারধর। টাকা-পয়সাও কেড়ে নেওয়া হয়। জানা যায়, কথিত এই টর্চার সেলে একজন থানা নির্বাচন কর্মকর্তাও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনার হঠাৎ করে এনআইডি কার্যালয় পর্যবেক্ষণে গিয়েও বিপাকে পড়েন। কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করতেই তার হাত টেনে ধরেন এক আনসার সদস্য। কোথায় যাচ্ছেন? কেন যাচ্ছেন? নানা প্রশ্ন করতে থাকেন এই নির্বাচন কমিশনারকে। পরে কয়েকজন কর্মকর্তা এগিয়ে এসে তাকে ভিতরে নিয়ে যান।
ভুল তথ্য সংশোধন, হারানোর কার্ড নেওয়া ও ঠিকানা পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার নাগরিককে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাগরিকদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এই কার্যালয়কে ঘিরে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। সরেজমিন এদিন দেখা গেছে, সিলেট থেকে এসে পাপ্পু নামে এক ব্যক্তি এই কার্যালয়ের নিচে এক দালালের কাছ থেকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে হারানো কার্ড সংগ্রহ করছেন। ওই দালাল নিজেকে কামাল পরিচয় দেন। ভুক্তভোগী পাপ্পু বলেন, আমি সিলেট থেকে চার হাজার টাকা খরচ করে এসেছি, আর অপেক্ষা করতে চাইনি। সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অফারও পেয়ে গেলাম। বিকাল ৫টায় আমার হাতে কার্ড এসেছে। এদিন টাঙ্গাইলের মোয়াজ্জেম হোসেন জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য এসেছিলেন। সকালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও চাকরি জীবনের খালাসি বুক সরবরাহ করেও আবেদন জমা দিতে পারেননি। বিকালে তদবির করে তিনি আবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একজন তরুণী জানান, নিজের পরিচয়পত্রে পিতার নামের ঘরে রয়েছে মাতার নাম, মাতার নামের ঘরে রয়েছে স্বামীর নাম। তার প্রশ্ন- নিজে ফরম পূরণ করার পরও এ ধরনের ভুল কেন হলো? ডাটা এন্ট্রিতে ভুল করায় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হচ্ছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালেও আগারগাঁওয়ের এই ভবনের নিচে কয়েকশ নাগরিককে লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে দেখা গেছে। বিকালে দেখা গেছে, আরও কয়েকশ জন আছেন ডুপ্লিকেট কার্ড হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়। ধারণা পাওয়া যায়, তথ্য সংশোধন ও নতুন পরিচয়পত্র নিতে আসা এসব নাগরিকের আবেদন নিয়ে চলছে এক ধরনের বাণিজ্য। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন দালালকে র‌্যাব-পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রকল্পের কিছু লোকের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমার অবস্থান জিরো টলারেন্স। যারাই দায়ী থাকবে তাকেই বের করে দেওয়া হবে। দালালদের ধরিয়ে দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

লেমিনেটেড পরিচয়পত্রেও টাকা : ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি কার্যকর হলেও স্মার্টকার্ড বিতরণের সময়সূচি এখনো ঘোষণা করেনি ইসি। এরই মধ্যে ইসির কাছে যে কোনো সেবা নিতে ২০০ থেকে এক হাজার টাকা ফি গুনতে হবে নাগরিকদের। ভোটারের তথ্য যাচাইয়ে দুটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে নির্বাচন কমিশন। এককালীন নিবন্ধন ফি দিয়ে নির্ধারিত নাগরিকের তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের এ সেবা পাবেন তারা। সেই সঙ্গে নষ্ট ও হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে যে কোনো নাগরিকের নির্ধারিত ফি দিতে হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে নাগরিকদের পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন ও ডুপ্লিকেট আইডি কার্ড নিতে ফিও নির্ধারণ করা হয়েছে। ফি কার্যকরের ঘোষণার পর মাত্র আড়াই মাস সময় পেয়েছে তারা। দেশে ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ লাখের হাতে কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি। বাকিদের হাতে রয়েছে লেমিনেটেড পরিচয়পত্র। বিনামূল্যে প্রথমবার এ পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। হারানো কার্ড পুনরায় নিতে বা সংশোধনেও এতদিন বিনামূল্যে সেবা দিয়েছে ইসি। বিনামূল্যে শিগগিরই নাগরিকদের স্মার্টকার্ডও দেওয়ার কথা রয়েছে। কোন তারিখে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে, তা ঘোষণা না হলেও ১ সেপ্টেম্বর যে কোনো সংশোধিত ও ডুপ্লিকেট লেমিনেটেড পরিচয়পত্র নিতে অন্তত ২০০ টাকা করে দিতে হবে নাগরিককে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিনামূল্যে তথ্য সংশোধন ও হারানো এনআইডি নেওয়া হবে। আমরা সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর থেকে অবশ্যই ফি দিয়ে তা নিতে হবে। বিধি মেনে ফি কার্যকরে প্রজ্ঞাপন ও গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। ৩১ আগস্টের মধ্যে যাদের আবেদন পড়বে তাদের সেবা পেতে টাকা দিতে হবে না। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধিত লেমিনেটেড কার্ড নিতেও টাকা দিতে হবে। তিনি জানান, স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। বিনামূল্যে তা বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর