সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিশু নির্যাতনকারীদের বিচার হবেই -প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা শিশুদের ওপর নির্যাতন করে বা শিশুদের হত্যা করে তাদের বিচার আমরা করবই ইনশাল্লাহ। তারা ছাড়া পাবে না। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক শিশুর জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য দেশ গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল দুপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আমরা তা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ঘাতকের বুলেট নিষ্পাপ শিশু রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। তাকেও কেড়ে নিয়েছে। আর যেন কোনো শিশুর ভাগ্যে রাসেলের মতো ঘটনা না ঘটে সেটাই আমাদের কাম্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি, আমাদের দেশে শিশুদের বাড়িতে নির্যাতন করা হয়। আমি ঠিক জানি না, বুঝি না, এরা কি মানুষ? একটা ছোট্ট শিশুকে নিয়ে আসে কাজ করাতে, আর তার ওপর অত্যাচার করে, মারধর করে। নিজের যে সন্তান, নিজের যে শিশু, তাদের কথা মনে করে না? শেখ হাসিনা বলেন, একটা বাচ্চা... গরিব ঘরে জন্ম হওয়া- সেটাই কি তার অপরাধ? সেও তো মানুষ। তারও তো অধিকার আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন একটা ঘটনা ঘটে, এরপর সে ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটার প্রবণতা দেখা যায়। ঠিক জানি না, এটা বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রের কোনো একটা দিক কি না। তিনি বলেন, আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এ ধরনের ঘটনা কেউ যেন আর না ঘটায়। কেউ যেন এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ না করে। আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে। তাদের জীবন সুন্দর হবে এবং এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে যারা শিশু, আগামী দিনে বড় হয়ে তারাই তো নেতৃত্ব দেবে। ছোট ভাইয়ের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। রাসেল আমাদের সবার নয়নের মণি ছিল। ছোট্ট রাসেলকে কোলে করে বড় করেছি। পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত রাসেলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আব্বা প্রায়ই জেলে থাকতেন। রাসেলকে নিয়ে জেলে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে কিছুতেই বাবাকে ছেড়ে আসতে চাইত না। যেদিন আমরা বাবার কাছ থেকে আসতাম সেদিন রাসেল সারা রাত কাঁদত। মাঝে মাঝে জিদ ধরত বাবাকে জেলখানা থেকে নিয়ে আসবে। আপ্লুত শেখ হাসিনা আরও বলেন, আপনজন হারিয়ে বেঁচে থাকাটা, বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে এই বেঁচে থাকাটা যে কত কষ্টের, সেটা আমি ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারব না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের কাছ থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশে যেন কোনো রকম জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের স্থান না হয়, মাদকাসক্ত হয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের জীবনটাকে নষ্ট না করে। প্রতিটি শিশুকে পড়াশোনা করতে হবে। প্রতিটি শিশুকে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী, সংগঠনের মহাসচিব মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী এমপি, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এমপি, মোজাহিদুর রহমান, কে এম শহীদুল্লাহ এবং মুজিবুর রহমান হাওলাদার বক্তব্য দেন। শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয় আতিকা সাইয়ারা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেয় শিশু তামিন তাজওয়ান। পরে তিনি রচনা, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পুরস্কার বিতরণের সময় শিশুদের আদর করেন শেখ হাসিনা।

 

সর্বশেষ খবর