সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে অচল রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেলা সাড়ে ৩টা। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটর মোড়। টানা দুই ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন উত্তরাগামী যাত্রী রায়হান উদ্দীন। শুধু রায়হান নন, বাংলামোটর মোড়ে তার মতো উত্তরা, মিরপুর এবং বাড্ডাগামী অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন অপেক্ষা করছিলেন। একই চিত্র ছিল রাজধানীর  আগারগাঁওয়েও। হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে বারবার বাসে উঠতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিলেন উত্তরাগামী যাত্রী লায়লা বানু। আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন। হেঁটে আগারগাঁও বাস টার্মিনালে এলেও পৌনে এক ঘণ্টা ধরে কোনো বাসে উঠতে পারছিলেন না তিনি। লায়লা বানু বলেন, ‘বাস কম, যাত্রী অনেক বেশি। মানুষের ভিড়ে কোনো বাসে চড়া যাচ্ছে না।’ তবে হঠাৎ কী কারণে এ অবস্থা- জানা নেই তার।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটু সামনে যাওয়ার পরই দেখা যায়, উত্তরাগামী জাবালে নূর পরিবহনের সবগুলো বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানার চেষ্টা করলে জাবালে নূর পরিবহনের চালক মিজান বলেন, ‘পরিবহন সমিতির লোকদের সঙ্গে পুলিশ খারাপ আচরণ করেছে। যে কারণে সব বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজনকে পুলিশ মারধর করেছে।’ জানা গেছে, কাগজপত্র না থাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদফতরের সামনে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত মিরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী হিমাচল পরিবহনের চালক মনির হোসেনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। এ সময় পুলিশ মনির হোসেনকে বাস থেকে নামতে বলে। বারবার বলার পরও বাস থেকে না নামার কারণে পুলিশ তাকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামাতে গেলেই অন্যসব গাড়ির চালকরা একসঙ্গে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই এ বিষয়টি তারা বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের সূচনা করেন। এ সময় চালকরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। রীতিমতো অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীবাহী পরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকা অনেকেই হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে শুরু করেন। বিশেষ করে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মিরপুরবাসী। মিরপুর থেকে আজিমপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, উত্তরা ও গুলশান বাড্ডাগামী যাত্রীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া ওইসব রুট থেকে ছেড়ে আসা মিরপুর অভিমুখী বাসগুলোও গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এতে যাত্রীরা পড়েন মহাবিপদে। মিরপুর কাজীপাড়া থেকে ১০ নম্বর হয়ে মিরপুর ১১, ১২ এবং কালসী রোড পর্যন্ত ছিল বাস প্রত্যাশী মানুষের ঢল। ভিড়ের মধ্যে বেশকিছু অ্যাম্বুলেন্সও চোখে পড়ে- যেগুলোকে মানুষ ঠেলে গন্তব্যে যেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল, আজিমপুর কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো মিরপুর-১০ পৌঁছানোর আগেই কাজীপাড়া বাস স্টপেজে থেমে যায়। অন্যদিকে উত্তরা কিংবা গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো কালশীরোড পর্যন্ত এসেই থেমে যায়। এভাবে সৃষ্ট অবরোধের মধ্যে এ রুটে কেবল দু-একটি বিআরটিসি বাস চলতে দেখা যায়। তবে এগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের ঝুলে ঝুলে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে। দুপুর আড়াইটার দিকে পূরবী সিনেমা হলের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বাস শ্রমিকরা। তবে বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে মিরপুর উপ-কমিশনার অফিসে পরিবহন সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজধানীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রী পরিবহন পুনরায় স্বাভাবিক হয়। এ প্রসঙ্গে মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ জানান, ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমীনের দেওয়া কারাদণ্ডের প্রতিবাদেই বাস-শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যদিয়ে সন্ধ্যার পর বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।

 

সর্বশেষ খবর